বিশ্বাসের অপ্রাপ্তি

প্রকাশিত: ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২৩

বিশ্বাসের অপ্রাপ্তি
নিউজটি শেয়ার করুন

 

মোহনীয়তার এই দুনিয়ায় বিশ্বাস বড্ড বাজে একটা বিষয়। আবার হতে পারে অনেক বড় একটা বিষয়। মানুষ নির্ভর তা। ঠুনকো এই পরিবেশে যাকে তুমি মন থেকে বিশ্বাস করে অন্ধ বলে বিবেচিত হবে, সে বোধহয় বিশ্বাসের প্রাপ্তি কখনো উপলব্ধি করতে পারে নি। যদি পারতো তবে সে কখনো তোমায় অন্ধ বলে স্বীকৃতি দিত না। আর যাকে সন্দেহের কারণে বিশ্বাসের স্থান দিতে পারো নি, যাকে অপমান করার পরও তোমার সঙ্গ ত্যাগ করে নি, একসময় সে তোমাকে বুঝিয়ে দিবে বিশ্বাসের প্রাপ্তি, প্রফুল্লতা তোমার জন্য লিপিবদ্ধ হয় নি, তুমি কেবল বিশ্বাসের অপ্রাপ্তিই চিনে এসেছো।

 

মানুষ বাঁচে মানুষের সাথে বসবাস করে। মানুষ বাচেঁ সুখে দুঃখে মানুষের সাথে নিজের মনের কথা প্রকাশ করে। মানুষ বাঁচে বিশ্বাস করে, নিজের করণীয়, নিজের জবান, নিজের সম্পদ অন্যের কাছে আমানতে রেখে। আর সেই মানুষই প্রতিনিয়ত মারা যায় কারো অবহেলায়, কারো ধোঁকায়, কারো দেওয়া প্রচণ্ড চাপে কিংবা কারো কর্কশ ব্যবহারে। চিন্তার ধারা যখন সীমাবদ্ধতায় রূপ নেয়, নির্ভরশীলতা তখন পাহাড়ের চুড়ায় উঠে যায়। যেখান থেকে সাহায্য ছাড়া মানুষ নিচে নামতে পারে না। যখনই সে বুঝতে পারে বিশ্বাসের নামে ছলনা হচ্ছে তখনই পুরো পাহাড় এমন ভাবে বিদ্ধস্থ হয়, সেই নির্ভরশীল মানুষ চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায়, হয় মানসিকভাবে, নাহয় শারিরীকভাবে।

 

অসহায়ত্ব যার শিরায় শিরায় রয়েছে, সে কখনো অবিশ্বাস করতে পারে না। নির্দ্বিধায় যে কেউকে সে নিজের অন্তরস্থলে জায়গা দেয়। সে কখনো পাওয়ার আশা করে না। যে যতটুকু বলে সে ততটুকুতেই তাকে মন প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করে। তার জন্য নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে চায়। দিন শেষে যখন মানুষ নিজের চাহিদা পূরণের পর তাকে ত্যাগ করে সে নিজেকে মানতে বাধ্য করে, “আমার ভাগ্যে ছিল এমন পরিস্থিতি। ব্যাপার না। আমি আর আমার করণীয় কোনোটাই মিথ্যা ছিল না।”

 

বারবার ধোঁকার বশবর্তী হয়ে যে বিশ্বাস শব্দটাকেও ভয় পায়, সেও একসময় ছলনায় পড়ে নতুন করে বিশ্বাস করতে শুরু করে, হয়তো একটুখানি শান্তির আশায় অথবা নতুন করে বাঁচার আশায়। আর যখনই সে বিশ্বাস করতে শুরু করে সে তার অতীত ভুলে যায়। ভুলে যায় তার সকল ক্ষত। তার এই হৃদয় অত্যন্ত নরম। সেখানে সামান্য টোকা লাগলেও সে অবসন্ন হয়ে পড়ে। তবুও সে বিশ্বাস টা কে ধরে রাখতে চায়। হাজার প্রচেষ্টার পর যে তাকে ছলনার বশবর্তী করে, সে তাকে কেবল ছলনায় ফেলার জন্য দিনরাত তার পেছনে ছুটে বেড়ায়। বিশ্বাসী মানুষটাও একসময় ভাবতে শুরু করে, বিপরীত পাশের মানুষ টা হয়তো শুধরিয়ে নিয়েছে নিজেকে। যখনই সে বিষয় টা মানতে শুরু করে, বিপরীত মানুষটাও এক বাঁকা হাসি দিয়ে নিজে প্রশান্ত অনুভব করে। সে তার কুকর্মে সফল হয়েছে, এটাই তার ধ্বংসাত্বক প্রাপ্তি। শুরু হয় নতুনভাবে প্রতারণা। বিশ্বাসী মানুষ টা বারবার পরিস্থিতি সামলে উঠতে চায়। কিন্তু তার এই নরম হৃদয় টা কে সেই প্রতারণাকারী মানুষটা এতোটায় আঘাত দেয় যে, অপর মানুষটার মেরুদণ্ড সোজা করার সাহসটাও থাকে না। ইতোমধ্যেই সে বুঝে নেয়, “বোধহয় এটাই ছিল আমার নতুন ভাবে আঁকড়ে ধরে বাঁচার প্রতারণা। হয়তো এটাই ছিল, আরেকবার বিশ্বাসের অপ্রাপ্তি।”

 

খুবই ভাগ্যবান সে মানুষজন, যারা সত্যিকারের বিশ্বাসের প্রাপ্তি বুঝতে পেরেছে, যারা আসল বিশ্বস্ত মানুষগুলোকে চিনতে পেরে নিজেদের জীবনে জায়গা দিতে পেরেছে। তারাই ভাগ্যবান, যারা বিশ্বাসের নামে প্রতারণার শিকার হয় নি। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব কিংবা যেকোনো সম্পর্কের মূল ভিত্তি এই বিশ্বাস। একটা দশ তলা বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন তথা মূল যদি মজবুত না হয়, তাহলে সামান্য ভূমিধ্বস এই বিল্ডিংকে তলিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। শতশত মানুষ প্রতিনিয়ত যানবাহনের চালকের উপর বিশ্বাস করে নির্দ্বিধায় অপরিচিত সেই যানবাহনে উঠে পড়ছে। যদি বিশ্বাসের মূলটাই মজবুত না হতো, রাস্তায় শত শত যানবাহন পড়ে থাকতো, কিন্তু যাত্রী থাকতো না। মায়ের গর্ভের সেই সন্তান যে কিনা নিজের জন্ম সম্পর্কে কিছুই জানে না, সেও কোনো প্রমাণপত্র ছাড়াই ছোটবেলা থেকে যাদের মা-বাবা বলে ডেকেছে তাদেরকেই নিজের মা-বাবা বলে বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাসের মূল এতোটাই দৃঢ়, চাইলেই কেউ এসে ইচ্ছা করে সেই বিশ্বাস টাকে ভেঙ্গে দিতে পারে না। ঠিক তেমনই একটা সম্পর্কও টিকে থাকে এই বিশ্বাসের উপর। যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে সম্পর্কের গাঢ়ত্ব নেই। যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে কোনো সৎ উদ্দেশ্য নেই। যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে বাঁচার কোনো মহৎ আগ্রহ নেই।

 

অপ্রাপ্তি বা অপ্রাপ্ততা শব্দটা দেখতে যত ছোট, তার বিবরণ ততটায় বড়। মানুষ অপ্রাপ্তি শব্দটা ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো নিজের জীবনের সাথে জুড়ে দিতে চায় না। কিন্তু কঠিন হলেও এই কথায় সত্য যে, সে মানুষগুলোই ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের জীবনের সাথে অপ্রাপ্তি শব্দটাকে জুড়ে দেওয়ার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করে। দৈহিক কোনো শান্তি তারা অর্জন করতে পারে না। অন্যকে কষ্ট দেওয়া টা তাদের মনের শান্তি। এই সকল মানুষ খুব অকৃতজ্ঞ হয়। তারা কখনো অন্যের সুখ সহ্য করতে পারে না। অন্যদিকে যাদের জীবনে কখনো প্রাপ্তি শব্দটা জুড়ে যায়, তারা কখনো মানুষের ক্ষতি করতে পারে না।

 

আমরা অসহায়। সেই আসল আর নকল চেহারার ফারাক আমরা বুঝতে পারি না। সফল হোক তারা যারা বিশ্বাসের প্রাপ্তি অর্জন করতে পেরেছে। সফল হোক তারা, যারা অন্যের বিশ্বাস কে মূল্য দিয়েছে। সবসময় মানুষের কথার মূল্যায়ন করতে শিখ। মানুষের বিশ্বাসের মূল্যায়ন করতে শিখ। অপ্রাপ্তি শব্দটা কখনো তোমাকে ছুঁতে পারবে না। ‘বিশ্বাসের অপ্রাপ্তি’-এর মতো যন্ত্রণাদায়ক শব্দটা আর কখনো তোমার জীবন ঘেঁষে তোমাকে ভেঙ্গে ফেলতে পারবে না।

লেখাঃ ছিদরাতুল মুনতাহা


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ