বরিশালে আ’লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই

প্রকাশিত: ৩:১৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০২৩

বরিশালে আ’লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই
নিউজটি শেয়ার করুন

 

বরিশালের ৬টি আসনের একটি বাদে ৫টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা স্বস্তিতে নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ১৫ জন। নৌকার ভরাডুবির আশঙ্কা অন্তত দুটি আসনে। নৌকার বিরুদ্ধে আছেন জোটের শরীক দলের হেভিওয়েট প্রার্থীও।

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশালের ৬টি আসনে ৫৪ জনের মনোনয়নপত্রের যাচাই বাছাইয়ে নানা অসঙ্গতিতে বাতিল হয়েছেন ছয় প্রার্থী। সাতজনের বিষয়ে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে।

 

 

 

রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে শুনানি শেষে বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বাতিল হওয়া প্রার্থীরা বৈধ কাগজ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।

 

 

 

শহিদুল ইসলাম বলেন, সাতজনের মনোনয়ন আরও যাচাই বাছাইয়ের জন্য রাখা হয়েছে। আজ ৭ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে৷ এ ছাড়া ৬ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। যাদের বাতিল করা হয়েছে তারা বিধি অনুযায়ী আপিল করতে পারবেন।

 

 

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, জেলার ৬ আসনের ৫টিতেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। কেবলমাত্র বরিশাল এক আসনে দলের হেবিওয়েট প্রার্থী আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষাকৃত দুজনই নাজুক। এদের একজন জাতীয় পার্টির সেরনিয়াবাত সেকেন্দার আলী ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. তুহিন।

 

 

 

জেলায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা বরিশাল সদর আসন নিয়ে। বর্তমান সংসদ সদস্য, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম দ্বিতীয় দফায় নৌকার টিকিট পেলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন দলের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। দুই প্রার্থীর মাঠের শক্তিতে সাদিক এগিয়ে। তবে ক্লিন ইমেজের চাউর আছে শামীমের। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত স্থানীয় রাজনীতি।

 

 

বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এলাকায় আমি উন্নয়ন করেছি। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে বিশ্বাস করি। তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকাটা আমার কাছে অস্বস্তিকর। আশা করি সবাই নৌকার হয়ে কাজ করবেন। নির্বাচিত হতে পারলে আমি ও সিটি মেয়র খোকন মিলি বরিশালের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবো।

 

 

 

তবে সাদিকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে আমরা নির্বাচনে এসেছি। বরিশালের মানুষ সাদিক আব্দুল্লাহর পাশে আছে। যার প্রমাণ মিলবে আগামী ৭ জানুয়ারি। আমরা সংঘাত ও হানাহানিতে বিশ্বাসী নই।

 

 

তবে নিরপেক্ষ ভোটে মানুষ নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের রেডকার্ড দেখাবে বলে দাবি জাতীয় পার্টিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের।

 

 

বরিশাল ২ ও ৫ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সে কারণে আমরা নির্বাচনে এসেছি। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির প্রতিটি প্রার্থী জয়লাভ করবেন।

 

 

বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছি। আমার তৈরি একটি ফাউন্ডেশন দিয়ে হাজার হাজার মানুষের সেবা দেয়া হয়েছে। চক্ষু অপারেশনসহ বেশ কিছু রোগের ফ্রি ট্রিটমেন্ট করিয়েছি আমরা। আশা করি জনগণ সেগুলো মনে রাখবে এবং আমাদের পাশে থাকবে। দিন শেষে আমার জয় হবে।

 

 

 

বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথ বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে আমি মাঠে এসেছি। নির্বাচনে থাকবো নাকি থাকবো না সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন। আমি মানুষের পাশে ছিলাম আছি থাকবো।

 

 

 

তবে শাম্মী আহম্মেদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সৈয়দ মনির বলেন, শাম্মী আহমেদের পারিবারিকভাবে বরিশাল-৪ আসনের মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হিজলা মেহেন্দীগঞ্জের মানুষ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। কে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলো কে থাকলো তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। মানুষ নৌকাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।

 

 

বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী রাশেদ খান মেনন প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল-২ এবং ৩ আসনে। তারকা শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস দাঁড়িয়ছেন বরিশাল ২এ। ক্ষমতাসীনদের ভোটের কৌশলে এবার ভোটার উপস্থিতি বাড়বে জানিয়ে প্রার্থীদের সংঘাত সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

 

 

বরিশাল সুজনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হোক সেটা ভালো। তবে নির্বাচনকে ঘিরে আমরা কোনো সংঘাত চাই না। একটি দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় সংঘাতের একটি আশঙ্কা থেকেই যায়। তবে আমরা আশাকরি হাই কমান্ড বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণকে উপহার দেবে।

 

 

 

বরিশালের ৬টি আসনে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৭৪ জন ভোটার। ভোট হবে ৮২৭টি কেন্দ্রে। প্রতিটি কেন্দ্র নিরাপত্তায় থাকবেন প্রায় ২০ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ