বরগুনায় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূর শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা

প্রকাশিত: ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০

বরগুনায় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূর শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা
নিউজটি শেয়ার করুন

 

বরগুনার তালতলী উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় মার্জিয়া (৩০) নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে স্বামী মানিক খান, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মার্জিয়াকে মারধরের পর মাথা ন্যারা করে দেন। এছাড়াও তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে।

 

খবর পেয়ে গুরুতর আহত মার্জিয়াকে স্বজনরা উদ্ধার করে শুক্রবার সকালে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করেন।

 

জানা গেছে, ২০০৯ সালে তালতলী উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামের আব্দুল খালেক খাঁনের মেয়ে মার্জিয়াকে বিয়ে করেন বরগুনা সদর উপজেলার দুপতি গ্রামের আনোয়ার খানের ছেলে মানিক খান। বিয়ের পরে শ্বশুর খালেক খাঁন জামাতা মানিককে বাড়ি নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে মানিক শ্বশুর বাড়ির পাশেই বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। মানিক দম্পতির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন বছর আগে মানিক ঢাকা চলে যান। ওই সময় থেকেই মানিক স্ত্রী ও দুই কন্যার কোন খোঁজ খবর নেন না। গত বৃহস্পতিবার মানিক শ্বশুর বাড়িতে আসেন এবং স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে ওইদিন রাত ১১ টার দিকে মানিক ব্যবসার কথা বলে মার্জিয়াকে বাবার কাছ থেকে ফের দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। টাকা দিতে স্ত্রী অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হন মানিক। পরে মানিক মার্জিয়াকে বেধরক মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে যোগ দেন বোন জাকিয়া ও মা আলেয়া। তারা মার্জিয়ার শরীরের ১২ স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা এবং চুল কেটে দেন। এসময় প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনে মার্জিয়াকে উদ্ধার করেন এবং শুক্রবার তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় স্বজনরা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

 

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, গরম খুন্তির ছ্যাঁকায় মার্জিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে দগদগে ঘা হয়ে ফুলে গেছে। শরীর ব্যাথায় নড়তেও পারছেন না তিনি। শরীরের অন্যান্য জায়গায়ও আঘাতের ফলে কালচে দাগ হয়ে আছে। মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে।

 

প্রতিবেশী সুর্য্যভানু বলেন, রাতে মানিকের বাড়িতে ডাক চিৎকার শুনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মার্জিয়াকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করছেন। তারা মার্জিয়ার শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিচ্ছেন। আমি যাওয়ার পরে তারা মার্জিয়াকে ছেড়ে দেয়।

 

মার্জিয়ার বাবা আবদুল খালেক খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে মানিক। গত তিন বছর ধরে আমার মেয়ের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে আমার মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে সবাই মিলে আমার মেয়েকে নির্মম নির্যাতন করেছে। গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। প্রতিবেশীরা এগিয়ে না গেলে ওরা আমার মেয়েকে মেরেই ফেলতো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

 

আহত মার্জিয়া কান্নাজরিত কণ্ঠে বলেন, বিয়ের পর বাবা আমার স্বামীকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দেয়। ওই টাকা দিয়ে আমার বাবার বাড়ির পাশে বাড়ি নির্মাণ করে মানিক। গত তিন বছর আগে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে ফেলে রেখে ঢাকা চলে যায় সে। আমার কোন খোঁজ খবর নেয়নি। বৃহস্পতিবার গ্রামে এসে আমার বাবার বাড়িতে যায়। আমাকে কৌশলে ওই রাতে তাদের বাড়ি নিয়ে যায় এবং ব্যবসার কথা বলে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমি এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করে চুল কেটে দিয়েছে।

 

অভিযুক্ত স্বামী মানিক খান যৌতুক চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সামান্য ঝগড়াঝাটি হয়েছে। মারধর কিংবা কোন খুন্তির ছ্যাঁকা দেইনি।

 

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিখিল চন্দ্র বলেন, মার্জিয়ার শরীরের ১২ স্থানে আগুনে ঝলসে যাওয়ার মত চিহৃ রয়েছে। তার মাথায় পিছনের চুল কাটা।

 

তালতলী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ