বরগুনা জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক!

প্রকাশিত: ৩:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২২

বরগুনা জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক!
নিউজটি শেয়ার করুন

 

নবকন্ঠ ডেস্ক, বরিশালঃ ৭ মার্চ কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদন দেওয়া জেলা যুবলীগ কমিটির ২৮ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়।

 

সদ্য ঘোষিত বরগুনা জেলা যুবলীগের কমিটিতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিরা পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলের অনেক নেতা-কর্মী। তাঁদের ভাষ্য, নতুন কমিটির অর্ধেক সদস্যই বিতর্কিত।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন কমিটির সভাপতি রেজাউল কবির ১৯৮৭-৮৮ সালে নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ বরগুনা জেলা শাখার সদস্য ছিলেন। এ সম্পর্কে রেজাউল কবির বলেন, ‘আমি ৮৮ থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছাত্র সমাজ করলে গত কমিটিতে আমাকে সহসভাপতি করা হয়েছিল কেন? এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ তবে সে সময়কার ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক গাজী মো. ফোরকান বলেন, ‘রেজাউল কবির আমাদের সঙ্গে ছাত্র সমাজের রাজনীতি করতেন।’

 

সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ১১ বছর ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাড়ার পর থেকে যুবলীগের সঙ্গে আছি। ১৭ বছর ধরে জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয় না। এ কারণে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিলেও আমার নাম না আসায় নিষ্ক্রিয় বলা হচ্ছে।’

 

১০ নম্বর সহসভাপতি জাহিদুল করিম ২০১৫ সালে গঠিত বরগুনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ১২ নম্বর সদস্য ছিলেন। এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জাহিদুল করিম কোনো মন্তব্য করেননি। তবে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে জাহিদুল করিমের সদস্যপদ আছে। নতুন কমিটির ৩ নম্বর সহসভাপতি হুমায়ূন কবির বরগুনা বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীকে মারধরের মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি বর্তমানে জামিনে আছেন।

 

নতুন কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ইমতিয়াজ (নয়ন ব্যাপারী) চুরি, মাদকসহ আটটি মামলার আসামি। তালতলীর রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধমূর্তি চুরির অভিযোগের মামলার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তিনি বর্তমানে জামিনে আছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমার নামে চার-পাঁচটি মামলা ছিল, সেগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে। রাজনীতি করতে গেলে মামলা তো হবেই।’

 

সদ্য ঘোষিত কমিটির ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন (রাসেল ফরাজী) জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ২০১৪ ও ’১৯ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন তিনি। তবে ইমরানের দাবি, ‘ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় কোনো মনোনয়ন ছিল না। যুবলীগের নতুন কমিটিতে যাঁরা পদ পাননি, তাঁরা আমাকে বিদ্রোহী বানানোর চেষ্টা করছেন।’ এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাস হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো প্রার্থী ছিলেন না। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলসমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।

 

কমিটির অর্থ সম্পাদক বায়েজিদ হাসান এলাকার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কখনো যুক্ত ছিলেন না। তিনি ঢাকায় থাকেন। বায়েজিদ বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। ২০০৫ সাল থেকে ঢাকায় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি।

 

জেলা যুবলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দীন বর্তমান কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি করা লোকজন, মাদক মামলার আসামি এবং উপজেলা-পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করা ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত নন।

 

জেলা যুবলীগের নতুন কমিটির সভাপতি রেজাউল কবির বলেন, ‘এ কমিটি যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়েছেন। তাঁরা যা দিয়েছেন, আমার জন্য তা–ই শিরোধার্য। ঢাকা থেকে আমাদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়েছিল। সেখানে কেউ কেউ কোনো তথ্য গোপন করে থাকতে পারেন, তবে সেসব তথ্য আবার কেন্দ্রের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ