ত্রাণ নিতে আসাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের গুলি, নিহত ৩

প্রকাশিত: ১২:৫৯ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০২৫

ত্রাণ নিতে আসাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের গুলি, নিহত ৩
নিউজটি শেয়ার করুন

 

আবারও ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালাল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহে স্থানীয় সময় দুপুরে ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া মানুষদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। একে তো ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি, তার ওপর ইসরায়েলি গুলি, আতঙ্কিত হয়ে দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে অসহায় ফিলিস্তিনিরা। এ সময় পদদলিত হয়ে কমপক্ষে তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

 

 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য। গতকাল ত্রাণ সরবরাহ করছিল নতুন মানবিক সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন—জিএইচএফ। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরুর কিছুক্ষণ পরই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। দীর্ঘ ১১ সপ্তাহ ধরে তীব্র খাদ্য সংকটের পর স্বাভাবিকভাবেই ত্রাণ সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে গাজার বাসিন্দারা।

 

 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক লাখ মানুষের ভিড় সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা ছিল না জিএইচএফের। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যর্থতা স্বীকার করে সরে যায় তারা। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিকেলের দিকে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে এত মানুষ ভিড় করেছিল যে তাদের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তাদের টিম পিছিয়ে আসে।

 

 

আর এরপরই রাফাহর আকাশে দেখা যায় বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি হেলিকপ্টার। সেগুলো থেকে ত্রাণ সংগ্রহকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ও ফ্লেয়ার ছোড়া হয়। শুধু তাই নয়, ট্যাংক থেকেও গোলাবর্ষণ করা হয়। বার্তা সংস্থা এপি নিশ্চিত করেছে এসব তথ্য। তবে, এসব হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানায়নি সংবাদ সংস্থাটি।

 

 

ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, ত্রাণ কেন্দ্রের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে তারা। পরে, রাতে এক ভাষণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ত্রাণ কেন্দ্রে কিছু সময়ের জন্য বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু খুব কম সময়ের মধ্যেই আবার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।’

 

 

অনেকেই বলছেন, নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রমাণ করে, ইসরায়েল জিএইচএফের বিতরণ কার্যক্রমকে সক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং খাদ্য সরবরাহকেও একটি সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছে।

 

 

উল্লেখ্য, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে সংস্থাটি আগে থেকেই বিতর্কিত। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় নিবন্ধিত হয় এটি। তবে সংস্থাটি প্রথমবারের মতো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে গত ২৬ মে। এর আগের দিন, ২৫ মে জিএফএইচের-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক জেক উড পদত্যাগ করেন। সংস্থাটি মানবিক সহায়তায় নিরপেক্ষতা, মানবতা ও স্বাধীনতার নীতিমালা অনুসরণ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

 

এটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় গঠিত একটি সংস্থা। এরা নিজেরাই গাজার মানবিক সংকটের জন্য দায়ী। দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মানবিক সংস্থাগুলোর ত্রাণ আটকালেও হঠাৎ করে জিএফএইচ-কে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে, যা সন্দেহজনক। অনেকের মতে, এটি আসলে সহায়তার নামে নজরদারি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কৌশল। গতকাল রাফাহে ত্রাণ বিতরণের সময় ইসরায়েলি গোলাগুলি আর নেতানিয়াহুর বক্তব্যের পর এমন ধারণা আরও জোরালো হলো।

 

 

অনেকেই সংস্থাটির যোগ্যতা ও ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। গাজার বাসিন্দারা বলছেন, এমন একটি অবিশ্বস্ত ও অপ্রস্তুত সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ শুধু বিপজ্জনকই নয়, বরং ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ