ঢাকা ৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২২
বরিশাল, নবকন্ঠ ডেস্ক :: প্রত্যেক বছর পাঠ্যপুস্তক ছাপানো নিয়ে বছরের শেষ সময়ে এসে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ বছর কাগজ সংকটে নতুন পাঠ্যপুস্তক ছাপানোয় হিমশিম খাচ্ছে প্রিন্টিং প্রেস মালিকরা। বর্তমানে মাধ্যমিকের বই ছাপানোর কাজ চললেও থমকে আছে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ। প্রেসের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢিমেতালে মাধ্যমিকের ছাপা কাজ কিছুটা চালিয়ে নিতে পারলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ।
তারা বলছেন, টাকা দিয়েও ভালোমানের কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। কাগজের মিলগুলো কাগজ তৈরির যে পাল্প বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় তা এলসির সমস্যায় আনা যাচ্ছে না। এর জন্য আপাতত ভালোমানের কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে উজ্জ্বল ভালোমানের কাগজে বই ছাপানোয় অনড় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
সময়মতো কাগজ না পাওয়ায় মানসম্পন্ন বই বাচ্চাদের হাতে তুলে দেয়া অনেক কষ্টকর হবে বলে জানান প্রেস মালিকরা। প্রাথমিকের বই ছাপানো বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। তবে মাধ্যমিকেও কাগজের সংকট থাকলে এ ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
প্রতিবছর অক্টোবর মাসে প্রাথমিকের প্রায় কয়েক কোটি বই বিভিন্ন উপজেলায় পৌঁছে যায়। এবার বই ছাপানো এখনো শুরু না হওয়ায় টালমাটাল অবস্থায় মালিকরা। এর ফলে আগামী ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি বই উৎসবে বাচ্চাদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার প্রায় ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮১২টি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮টি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৪ কোটির উপরে বই ছাপানো হবে। সূত্র আরও জানায়, এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বই ছাপানো হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১০ কোটি বই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর মাতুইল এলাকায় বেশির ভাগ প্রিন্টিং প্রেসের অবস্থান। সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে ফায়িজা প্রিন্টিং প্রেস মালিকের ছেলে হাসিব খান বলেন, বর্তমানে মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ চলছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকের ১ম ও ২য় শ্রেণির ২১ লাখ বই ছাপানোর কাজ এখনো ধরতে পারিনি। বাচ্চাদের বই ৮০ গ্রাম অফসেটে ছাপাতে হবে। বর্তমানে মিলগুলোর কাছে এই কাগজের উৎপাদন নেই। হাসিব আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে কাগজ মিলগুলো এলসি করতে পারছে না। এর ফলে কাগজের কাঁচামাল পাল্প আসছে না। ফলে টাকা দিয়েও কাগজ মিলছে না।
তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে টেন্ডার করি। ওই সময় কাগজের সর্বোচ্চ দাম ছিল প্রতিটন ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতিটন কাগজের দাম দেড় লাখ টাকা। তবে টাকা দিয়েও মানসম্পন্ন কাগজ মিলছে না।
তিনি বলেন, এবার যদি ননগ্লেস কাগজে বই ছাপাতে দেয় তাহলে এখনো সম্ভব। তাছাড়া এবার প্রাথমিকের বই দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। মহসিন প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজার আবদুল কাইয়ুম বলেন, অক্টোবর থেকে মাধ্যমিকের (ষষ্ঠ, নবম, দশম) এবতেদায়ি ১ম ও ২য় শ্রেণির ৭৬ লাখ বই ছাপানোর কাজ চলছে। তবে প্রাথমিকের ১ম ও ২য় শ্রেণির ৬ লাখ বই এখনো ছাপা শুরু হয়নি।
তিনি বলেন, ভালো কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য ছাপা বন্ধ আছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যা এখন উৎপাদনেও সমস্যা সৃষ্টি করছে আর কাগজের শঙ্কট তো আছেই। এর মধ্য থেকে বই ছাপার কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। ব্রাইট প্রিন্টিং প্রেসের মালিক এস এম মহসীন বলেন, বর্তমানে মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ চলছে। কাগজের মহাসংকট, টাকা দিয়েও মিলছে না। তিনি বলেন, ২১ লাখ প্রাথমিকের বইয়ের অর্ডার পেয়েছি। তবে ছাপাতে পারছি না। আমার প্রিন্টিং প্রেসের ক্যাপাসিটি ভালো। তবে কাগজ সংকটে ছাপাতে পারছি না।
মহসীন বলেন, টাকা দিয়ে রাখছি মিলগুলো কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না।
বৈশ্বিক কারণ উল্লেখ করে বলেন, ডলার সংকটে গত ৬ মাস হলো কাগজ মিলগুলো আগের মতো পাল্প এলসি করতে পারছে না। এছাড়াও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটে পেপার মিল যেখানে আগে ১০০ টন কাগজ উৎপাদন করত, এখন দিনে ২০ টন উৎপাদন করছে। সব দিক দিয়ে ভয়াবহ সংকটের দিক দিয়ে যাচ্ছি বলে জানান এ তিনি। তিনি বলেন, মাধ্যমিকের কাজ ভালোভাবেই শুরু হয়েছে, প্রাথমিকের কাজ একবারেই বন্ধ।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকের পাঠ্যবই না ছাপানোর মূল সমস্যা হলো মানসম্পন্ন কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেস মালিকরা ভালো কাগজ না পাওয়ায় বই ছাপাতে পারছে না।
তিনি বলেন, প্রাথমিক অধিদপ্তর (ডিপিই) মূলত এটা তদারকি করছে। এখন ডলার সংকটে কাগজ তৈরির ‘ভর্জিন পাল্প’ কাগজ মিল মালিকরা আমদানি করতে পারছে না। এখন দেশেই রিসাইকেল করা ভালোমানের কাগজ দিয়ে বই ছাপানোর বিষয়ে কথা হয়েছে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই দেবো? না ভালোমানের কাগজের বই ছাপাব? এটাই এখন মুখ্য বিষয়। আমরা চেষ্টা করছি হয়তো আগের মতো ব্রাইট হবে না। তবে ব্রাইটনেস একটু কম হবে এরকম কাগজ দিয়ে বই ছাপানো হবে।
তিনি বলেন, মাধ্যমিকের বই ছাপানো প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক