ঈদে বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাটে ইজারাদারদের চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ১২:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২২

ঈদে বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাটে ইজারাদারদের চাঁদাবাজি
নিউজটি শেয়ার করুন

 

বরগুনার বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাটে বিষখালী নদী পারাপারে ইজারাদাররা যাত্রীদের জিম্মি করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহার সময় নির্ধারিত ভাড়ার দশগুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও যাত্রী হয়রানি, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচারণ, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক, অপর্যাপ্ত ও ত্রুটিযুক্ত ট্রলার দিয়ে নদী পারাপারসহ বিভিন্ন অভিযোগ যাত্রীদের। যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদের মওসুমগুলোতে চলছে চাঁদাবাজি।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো খেয়া পরিচালনা করছেন ইজারাদার। খেয়া পারাপারের জন্য যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে টোল আদায়কারীরা খারাপ ব্যবহার করছেন এবং লাঞ্ছিত করছেন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহার সময় ঘাট ইজারাদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠে।

 

বেতাগী -কচুয়া খেয়াঘাটের কাঠালিয়া পয়েন্টের কচুয়া গ্রামের ঘাট ইজারাদার রুস্তুম আলী হাওলাদার ও নুরুল হক স্থানীয় লোক হওয়ায় যাত্রীদের জিম্মি করে বিষখালী নদীর কচুয়ার পাড় থেকে ভাড়া আদায় করছেন। ভাড়া আদায় নিয়ে প্রায় যাত্রীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া ও মারধরের ঘটনা ঘটছে।

 

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে বরগুনা জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নাহিদ মাহমুদ লিটুসহ একাধিক ব্যাক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীনের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। এছাড়া একাধিক ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারণকৃত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া এবং এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার জন্য প্রতিকার দাবি করেছেন।

 

 

স্থানীয়রা জানান, যাত্রী পারাপারে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পাঁচ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে ঈদের সময় ৫০ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের ফ্রি পারাপারের নিয়ম থাকলেও একই পরিমাণে টাকা আদায় করা হয়। সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা থাকলেও তা মানছে না আদায়কারীরা। ঈদের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল পারাপারে ১০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, বাইসাইকেল ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পাঁচ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, আসবাবপত্র ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা ও হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়।

 

 

একাধিক যাত্রী জানায়, ‘যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিকার হওয়া দরকার।’ বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা দিলীপ হাওলাদার বলেন, কচুয়া থেকে বেতাগীতে আসার সময় ভাড়া আদায়কারী রুস্তুম এক ভিক্ষুকের কাছ থেকে ৫০ টাকা হাতিয়ে নিল। আমরা নিষেধ করার পরেও শুনেনি।’

 

 

ভোর ৫ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পারাপারের নিয়ম, কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার পরেই ওই বিষখালী নদী থেকে পার হতে হলে চাইলে তার কাছ থেকে রিজার্ভ ৫০০-৮০০ টাকা আদায় করা হয়। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, মাত্র দুইটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার যাত্রী পারাপার করে। এতে বেশির ভাগ সময় চাকরিজীবী অফিসে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এতেও ভোগান্তি ও হয়রানি বাড়ছে।

 

 

এ বিষয় জানতে চাইলে টোল আদায়কারী মো. রুস্তুম আলী জানান, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় এবং অনেকে ভাড়াও দেয় না। এছাড়া নেতাদের এবং প্রশাসনের অনেককে টাকা দিতে হয়। তাঁর কাছেই আরেক প্রশ্ন,মোটরসাইকেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা আদায়ের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

 

 

শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন জানান, বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিকারের জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি করেছি।

 

 

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ‘সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে শিকগিরই অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি শুনেছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ