জয়পুরহাটে দিনে ১০ তালাক, এগিয়ে নারীরা

প্রকাশিত: ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩

জয়পুরহাটে দিনে ১০ তালাক, এগিয়ে নারীরা
নিউজটি শেয়ার করুন

 

বরিশাল, নবকন্ঠ ডেস্ক : জয়পুরহাটে কমছে না তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ। গত এক বছরের প্রত্যেক দিনে গড়ে ১৪টি বিবাহ নিবন্ধিত হলেও দিনে ১০টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ বিবাহের তুলনায় ৭১ শতাংশ তালাকের ঘটনা ঘটেছে। তালাক দিতে এগিয়ে আছেন নারীরা।

 

 

 

বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার পেছনে মুঠোফোনে পরকীয়া, সন্দেহ, মানসিক অবসাদ, যৌতুক, দাম্পত্য কলহসহ নানামুখী চাপের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন এবং যোগাযোগ কমে যাওয়াকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

 

 

 

জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ৫ হাজার ২৬০টি বিবাহ নিবন্ধিত হয়েছে। একই সময়ে আবার ৩ হাজার ৭৩৬টি তালাক হয়েছে। এর মধ্যে ছেলের পক্ষ থেকে তালাক ৭৭৩টি, মেয়ের পক্ষ থেকে তালাক এক হাজার ৪৭১টি এবং উভয়পক্ষ আপস রফায় তালাক হয়েছে এক হাজার ৪৯২টি। অর্থাৎ ছেলেপক্ষ থেকে তালাকের প্রায় দ্বিগুণ তালাক হয়েছে মেয়ের পক্ষ থেকে।

 

 

 

জয়পুরহাট জেলায় ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পাঁচটি পৌরসভা রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভাগুলোতে নিকাহ রেজিস্ট্রার রয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৭ জন কাজি জেলায় বিবাহ নিবন্ধন ও তালাকনামা করেছেন।

 

 

 

পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) শাহ্ আলম বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ নানা কারণে হচ্ছে। তবে গত বছর মুঠোফোনে পরকীয়ার কারণেই তালাক বেশি হয়েছে। উভয় পরিবারেরর সম্মতিতে বিয়ে হলেও কয়েক মাসের মধ্যে মেয়ে বা ছেলে অন্যত্র পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে আর তালাকের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে ছেলের চেয়ে মেয়ের সংখ্যায় বেশি।

 

 

 

আক্কেলপুর পৌরসভার কাজি মো. নূরুন নবী তালাকের এক উদাহরণ টেনে বলেন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে চাকরি করেন। স্বামী তার চাকরিজীবী স্ত্রীকে যেভাবে চলতে বলেন স্ত্রী তার কথা শোনেন না। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর তালাক হয়। দাম্পত্য জীবনে সন্দেহ তালাকের আরেকটি কারণ।

 

 

 

এখন বিবাহ আর তালাক প্রায় সমানের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। বছর পাঁচ-সাতেক আগে এমনটা হতো না। মেয়েরা বেশি তালাক দিচ্ছে। শতকরা ৭০ জন মেয়ে হলে ১০ জন ছেলে। আর বাকি তালাক আপসে হচ্ছে বলে মনে করেন জয়পুরহাট পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাজি সহিদুল ইসলাম।

 

 

 

সদরের চকবরকত ইউনিয়নের কাজি রুহুল আমীন বলেন, গত বছরে এই ইউনিয়নে ৪৩টি তালাক হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি আপসে আর ২১টি মেয়ে কর্তৃক। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হলেই তালাকের পথ বেছে নিচ্ছেন নারীরা। তালাকের পর তারা চলে যাচ্ছেন ঢাকায় গার্মেন্টস বা অন্যান্য সেক্টরে কাজের জন্য।

 

 

 

জয়পুরহাট জেলা রেজিস্ট্রার সহকারী আব্দুল খালেক বলেন, গত ২০২২ সালের ১২ মাসে বিবাহের তুলনায় ৭১ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। যা ২০১৯, ২০ বা ২১ সালেও এমন ছিল না। সে সময় ৪৫ থেকে ৫১ শতাংশ তালাক হয়েছে। তাই গত এক বছরের বিবাহ বিচ্ছেদের হার এ জেলার জন্য উদ্বেগজনক।

 

 

 

জয়পুরহাট জেলা রেজিস্ট্রার শরীফ তোরাফ হোসেন বলেন, বছরে যে পরিমাণ বিবাহ হচ্ছে তার চেয়ে তুলনামূলক তালাকই বেশি হচ্ছে। এ জেলায় যৌতুকের প্রথা বেশি। তাছাড়া মুঠোফোনে অন্যত্র কথা বলা, সন্দেহ, আর্থিক বিষয়সহ নানা কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ