কাঠালিয়ার জিনের বাদশার যতো অনিয়ম ও দূর্ণীতি

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩

কাঠালিয়ার জিনের বাদশার যতো অনিয়ম ও দূর্ণীতি
নিউজটি শেয়ার করুন

 

কাঠালিয়া প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়া শহীদ রাজা ডিগ্রী কলেজের চাকরিচ্যুত সাবেক অধ্যক্ষ আবুল বাশার বাদশা নানান ধরনের অনিয়ম, দূর্নীতি করার অপরাধে ২০২০ সালে চাকরি হারায়।

 

 

২০১৭ সালের ১মে তিনি অধ্যক্ষ পদে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। নিয়োগ প্রক্রিয়া অসচ্ছতা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ টেম্পারিং ও কলেজের ৫৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারণে ঝালকাঠির আদালতে অধ্যক্ষের অবৈধ নিয়োগ ও দূর্ণীতির ব্যপারে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। উক্ত মামলায় বাদশা দুইমাস হাজতবাস থেকে জামিনে রয়েছে। মামলার কার্যক্রম বর্তমানে ঝালকাঠির বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন।

 

 

২০১৬ সাল থেকে এনটিআরসিএ নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে বেসরকারী কলেজের শিক্ষক ও লাইব্রেরিয়ান পদের নিয়োগ প্রচলন হয়। কলেজের কৃষি শিক্ষার কোন বিভাগ নেই, নেই কোন ছাত্রও। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের এমপিওতে ভৌতিকভাবে পলাশ চন্দ্র শীল নামের একজনের ২২ হাজার টাকা স্কেলে বিল পাশ হয়ে আসে। এর নেপথ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বাদশা।

 

 

এছাড়াও কলেজের লাইব্রেরিয়ান পদে কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ না করে ৩ বছর পূর্বে কর্মরত দেখিয়ে মাসে ২২ হাজার টাকা স্কেলে আসাদুল নামের একজনের এমপিও হয়। এবং লক্ষ লক্ষ টাকা তসরুফ করে বাদশা।

 

 

মহাবিদ্যালয় জনবল কাঠামোর বেশি কর্মচারী না থাকা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ৭ জনকে বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেয় বাদশা। কলেজের অভ্যন্তরীণ সম্পদ গাছ,পুকুরের মাছ ও কলেজের জায়গায় দোকানঘর তুলে বরাদ্দ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে বাদশা। এছাড়াও বিভিন্ন সময় জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ থেকে মাঠ ভরাট, শহীদ মিনার নির্মাণসহ কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ আসা লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে সে।

 

 

এইচএসসি পরীক্ষার সময় নকলের সুযোগ দেয়ার কথা বলে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন। কলেজের গাছ,পুকুরের মাছ এমনকি গাছের পাতাও বিক্রি করে বাদশা ওরফে ভুয়া বাদশা ওরফে আঐ বাদশা। জানা যায় যে, বাদশা এমপি হারুনের কোটায় আওয়ামিলীগ এর রাজনীতি করে আওয়ামিলীগ এর নাম ভাঙিয়ে এই সকল কার্যক্রম চালিয়েছে।

 

 

বাদশা তার অদৃশ্য রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নিজ এলাকার বানাই স্কুল ও কলেজের সভাপতি হয়ে বানাই স্কুলেও তার নামের কুখ্যাতি রাখে। স্কুলের সভাপতি থাকা কালীন স্কুল ফান্ডের টাকা হাতিয়ে নেয় বাদশা,তাছাড়া স্কুলের গাছ বিক্রির টাকা, স্কুলের জায়গায় অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দ করে টাকা আদায় সহ বিভিন্ন ভাবে দূর্ণীতি ও অনিয়ম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বাদশা।জানা যায় যে, সে স্কুলের সভাপতি থাকাকালীন বিদ্যুৎ বিল না দেয়ার কারনে প্রায় দুই বছর স্কুলের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিলো যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাও মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটে।

 

 

স্কুলের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, “বানাই স্কুলের সভাপতি থাকাকালিন সময় আবুল বাশার বাদশা স্কুলের গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, বিভিন্ন ফান্ডের টাকা এবং স্কুল উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎ করেছে, স্কুলের জমিতে দোকান তুলে টাকা আত্মসাৎ করেছে।

 

 

বর্তমানে আবার এমপি হারুনের একটি ডিউ লেটার এনে প্রভাব খাঁটিয়ে স্কুলের সভাপতি হতে চায় বাদশা। তিনি আরো বলেন বাদশা ঐতিহ্যবাহী বানাই স্কুলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়া গিয়েছিল। বাদশার হাত থেকে মুক্ত হয়ে এই কয়েক বছরে স্কুল কিছুটা হলেও তার স্বাভাবিক রূপে ফিরে যায় কিন্তু আবারও বাদশা যদি এই স্কুলের সভাপতি হয় তাহলে স্কুলটাকে সে ধ্বংস করে দিবে যা কোনোভাবে কাম্য নয়। স্কুলের সকল শিক্ষক কর্মচারী এবং এলাকার সকল সচেতন নাগরিক সকলে বাদশার হাত থেকে মুক্তি চায়।”

 

 

জানা যায় যে, আমুয়া কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালিন চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ও অবৈধ দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলেও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বাদশা। মরিচবুনিয়া নিবাসী মামুন নামের একজন বলেন, তাকে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে দুই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বাদশা। দোকানঘর বরাদ্দ না পেয়ে টাকা ফেরত চেয়ে সে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বাদশার পিছনে ঘুরেও তার টাকা ফেরত পাননি। বাদশা তার এলাকার পশ্চিম চেঁচরি নিবাসি জামাল খানের স্ত্রীকে তাদের বাড়ির সামনের মাদ্রাসায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাত আট বছর আগে ত্রিশ হাজার টাকা নেয়। বিভিন্ন সময়ে সে টাকা চেয়ে ফেরত না পেয়ে এখন তার টাকার আশাই ছেড়ে দিয়েছে।

 

 

বাদশার এহেন কার্যক্রমের জন্য সকলের নিকট সে ভুয়া বাদশা, আঐ বাদশা ওরফে বেহায়া বাদশা নামে পরিচিত। উল্লেখ্য যে, তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েক বছর আগে কাঠালিয়ার মানুষজন তার মাথায় মানুষের মল ঢেলে দেয়। তাও বাদশার শিক্ষা হয়নি। সে সুযোগ পেলেই তার অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যায়।

 

 

কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহিন আলম জানান, বাদশার দূর্নীতির কোন শেষ নেই যেখাইনে খোঁজ নিবেন সেখানেই তার দূর্নীতি পাবেন। গত ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সম্মেলনকালীন সময়ে বাদশা পদ দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সভাপতি ও সেক্রেটারি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করে যা আমরা প্রতিহত করি।তারপরও ফরম বিক্রির ত্রিশ হাজার টাকা বাদশা এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করে। তিনি জানান “আমার মনে হয় দূর্নীতি করার জন্যই তার জন্ম হয়েছে।”

 

 

তার এহেন ঘৃণ্য অপকর্মের জন্য সে তার এলাকার মানুষের কাছে ভুয়া বাদশা,আঐ বাদশা, বেহায়া বাদশা ও জিনের বাদশা নামে পরিচিত। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবুল বশার বাদশার কাছে জানার জন্য তার ব্যাবহারিক মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও সে ফোন রিসিভ করেনি।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ