ঢাকা ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
পারিবারিক কলহের জেরধরে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর বিষপানে মৃত্যুর ঘটনায় বাড়ি ঘর ফেলে গা-ঢাকা দিয়েছে তার স্বামীসহ পরিবারের সকল সদস্যরা। ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা ? তা নিয়ে নানা সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের জঙ্গলপট্রি গ্রামে। মঙ্গলবার রাতে ওই গ্রামের সমাপ্তি সোম (২৬) নামের কৃষক পরিবারের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে বিষপানে অসুস্থ্য অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।
এলাকাবাসী এটিকে আত্মহত্যা বললেও গৃহবধুর পিতা, চাচা ও তাঁর ভাইয়েরা বলছেন নির্যাতন করে হত্যার পর সমাপ্তির মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, গা-ঢাকা দেয়ার আগে সমাপ্তির স্বামী ও স্বজনরা তাদেরকে জানিয়েছেন যে. মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সমাপ্তি পরিবারের সবার অগোচরে বিষপান করে স্বামীর বিছানায় ঘুমাতে যায়। এ সময় সমাপ্তি খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরিবারের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদে সে বিষপান করেছে বলে জানায়। স্বজনরা তখন তাকে দ্রুত গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠায়। বরিশালে যেতে পথিমধ্যে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
গৃহবধুর স্বামীর পরিবারের বরাত দিয়ে মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, আত্মহত্যাকারী গৃহবধু সমাপ্তি সোমের শুশ্বরের পরিবারটি একটি কৃষক পরিবার। তাঁর স্বামী অসিম সোম একজন পান চাষী। তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালবাসা ছিল। সম্প্রতি স্ত্রী তাঁর স্বামীকে রেখে পিত্রালয়ে বেড়াতে যায়। সেখানে স্বামীর অমতে ৮দিন বেড়ায়। এতে স্বামী অভিমান করে। তাঁর অভিমান ভাঙ্গাতে সোমবার সকালে প্রচন্ড বৃষ্টির ভেতরে সমাপ্তি পিত্রালয় থেকে রওনা হয়ে স্বামীর বাড়ির কাছের ষ্টেশনে ইজিবাইক থেকে নেমে স্বামীকে ফোন করে তাদেরকে বাড়িতে এগিয়ে নিতে ছাতা নিয়ে স্বামীকে আগাতে বলে। স্বামী ছাতা নিয়ে আগায়নি। কন্যা সন্তান নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে সমাপ্তি বাড়িতে পৌছে স্বামীর অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এরপর দুপুরের রান্না শেষে ভাত খেতে ডাকলেও স্বামী তাঁর হাতের দেয়া ভাত খায়নি। সে নিজে হাড়ি থেকে ভাত তুলে একা একা খেয়ে নেয়। রাতের খাবারের সময়ও স্বামী অসিম সোম একই কাজ করে। এতে পাল্টা অভিমান করে সমাপ্তি সোম পরিবারের সবার অগোচরে তাদের ঘরে রাখা পানচাষে ব্যাবহৃত কিটনাশক (বিষ) পানে আত্মহত্যা করে।
গৃহবধুর চাচাতো ভাই নিমাই বিশ্বাস বলেন, ১১বছর পূর্বে আমার চাচাতো বোন সমাপ্তিকে জঙ্গলপট্রি গ্রামের সুনীল সোমের ছেলে অসিম সোমের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। মৃত্যুর সময় সে ২মাসের অন্তস্বত্বা ছিল। তাদের সংসারে অন্যেসা (৭) নামের আরো একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে। বিয়েতে নগদ টাকা স্বর্নালঙ্কারসহ বড় অংকের যৌতুক দেয়া হয়। এরপর তাঁরা আমার চাচাতো বোনকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করে তাকে পাঠিয়ে আমাদের কাছ থেকে আরো তিনলাখ টাকা নিয়েছে। যৌতুক নিয়ে পারিবারিক কলহের কারণে স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা চাচাতো বোনকে নির্যাতন করে হত্যার পর তাঁর মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করার জন্য আমরা এখন থানায় অবস্থান করছি।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন জানান, নিহতের ভাই পার্শ্ববর্তি আগৈলঝাড়া উপজেলার সুতার বাড়ি গ্রামের স্বপন বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়েরের জন্য থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তি আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক