বাউফলে সিসা তৈরির কারখানা, হুমকিতে পরিবেশ

প্রকাশিত: ৫:২০ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০২২

বাউফলে সিসা তৈরির কারখানা, হুমকিতে পরিবেশ
নিউজটি শেয়ার করুন

 

পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর বাউফল সদর ইউনিয়নের ঘনবসতি এলাকায় সিসা তৈরির কারখানা গড়েছে প্রভাবশালী সাদ্দাম হোসেন নামের এক যুবক। কারখানায় টনে টনে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে এ সিসা তৈরি করছেন শ্রমিকরা। কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে গোসিংগা গ্রামের পাঁচ সহাস্রাধিক পরিবার।

 

জানা গেছে, সদর বাউফল ইউনিয়নের গোসিংগা গ্রামটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। গ্রামের মাঝখান দিয়ে পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কের পাশেই স্থানীয় রফিক নামের এক ব্যক্তির বাড়ি নির্মাণে জন্যে ভিটেমাটি ভাড়া নেয় স্থানীয় প্রভাবশালী সাদ্দাম হোসেন নামের এক যুবক। ভিটেবাড়ির চারদিকে টিনের ছাউনি দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। টিনের প্রাচীরের মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে ওই সিসার কারখানা।

 

পরিত্যক্ত ব্যাটারির কোষগুলো সিমেন্টের মতো জমাট বেঁধে যায়। মাটির গর্ত করে গর্তের মধ্যে কাঠ ও কয়লা দিয়ে অ্যাসিডমিশ্রিত জমাট বাঁধা বর্জ্য সাজানো হয়। এরপর জমানো ব্যাটারি গুঁড়ায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন ধরে যাওয়ার পরে একটি পাম্পের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক পাখা দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বাতাস দেন শ্রমিকরা। কাঠ ও কয়লা পুড়িয়ে একটি আগুনের কুণ্ডলী সৃষ্টি হয়। সিসা পুড়ে তরল হয়। বিষাক্ত কালো ধোঁয়া উড়ে যায় বাতাসে। এ বিষাক্ত ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে।

 

কারখানা শ্রমিক আলম জানায়, একটি বড় ব্যাটারি থেকে প্রায় ২২ কেজি সিসা, ছোট ব্যাটারি থেকে ১০ কেজি সিসা পাওয়া যায়। দৈনিক এক টন থেকে দেড় টন সিসা উৎপন্ন হয়। এ সিসা তৈরি করে চড়া মূলে খুলনা ও ঢাকার ব্যাটারির কারখানা ও প্লাস্টিক কারখানা মালিকদের কাছে বিক্রি করে করেন সিসার কারখানা মালিক।

 

স্থানীয়রা জানান, দিনে ব্যাটারির অ্যাসিডমিশ্রিত সিসা ও প্লাস্টিক আলাদা করা হয়। আলাদা করার পরে রাতে বিষাক্ত অ্যাসিডমিশ্রিত কাঠ দিয়ে পোড়ানো হয়। এ সময় ব্যাটারি পুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী নির্গত হয়। কালো ধোঁয়ায় পুরো গ্রাম ছেয়ে যায়। এতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে মিশে গাছপালা মরে যাচ্ছে।

 

সিসা তৈরির কারিকর আব্দুর রাজ্জাক জানান, একটি বড় ব্যাটারি থেকে প্রায় ২২ কেজি, ছোট ব্যাটারি থেকে ১০ কেজি সিসা পাওয়া যায়।

 

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, পুরাতন অকেজো ব্যাটারিকে পোড়ানো হলে তা থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়। নির্গত দূষিত পদার্থ বাতাসে মিশে মানুষের শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

 

কারখানার মালিক মো. সাদ্দাম বলেন, ‘এটা অবৈধ না। আর এতে কোনো ক্ষতিও হয় না। এ নিয়ে পত্রিকায় লেখার কিছু নাই। সরকারের কোনো অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর জন্য আবার কীসের অনুমোদন। কোনো অনুমোদন দরকার হয় না।

 

এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন বলেন, ‘এই অবৈধ কারখানা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ