স্কুল সভাপতিকে পেটানোর প্রধান শিক্ষক!

প্রকাশিত: ৪:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩

স্কুল সভাপতিকে পেটানোর প্রধান শিক্ষক!
নিউজটি শেয়ার করুন

 

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেওয়ার কারনে বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুল ইসলাম (৩৮)কে পেটানোর ঘটনা ঘটেছে।

 

 

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বারবান্ধা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার রাতে নির্যাতনের শিকার সভাপতি বাদী হয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ দুইজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনার আগের দিন (রোববার) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ওই সভাপতি।

 

গুগল নিউজে (Google News) নবকন্ঠ২৪’র সকল খবর পেতে ফলো করুন

 

অভিযুক্ত আবুল কাশেম (৪৮) উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারবান্ধা গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এছাড়া একই ইউনিয়নের বারবান্ধা গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে রঞ্জু মিয়াকে (৪০) আসামী করা হয়েছে। রঞ্জু মিয়া ওই প্রধান শিক্ষকের সম্পর্কে ভাতিজা। ভুক্তভোগি সভাপতি মনিরুল ইসলাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বারবান্ধা গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে।

 

 

 

নির্যাতনের শিকার বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ২০২১-২২ইং অর্থ বছরে উপজেলার উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত মোট ২লাখ ৭৫হাজার ৫০২টাকা যৌথ হিসাব নাম্বারে জমা হয়। তৎকালীন সভাপতি আইয়ুব আলীর মেয়াদ শেষ হলে গত বছর মনিরুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে প্রধান শিক্ষকসহ ব্যাংকে যৌথ হিসাব খুলতে যান সভাপতি মনিরুল ইসলাম। এ সময় তিনি দেখেন ব্যাংকে জমানো কোনো টাকা নেই।

 

 

 

সন্দেহ হলে খোঁজ নিয়ে জানতে পান তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে সমস্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম।

 

 

এর প্রতিকার চেয়ে রোববার (২৯ জানুয়ারি) সভাপতি বাদি হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। পরদিন (সোমবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই সভাপতি বারবান্ধা বাজার এলাকায় গেলে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ ভাতিজা রঞ্জু মিয়া তাকে এলোপাথারী পেটান।

 

গুগল নিউজে (Google News) নবকন্ঠ২৪’র সকল খবর পেতে ফলো করুন

 

এসময় স্থানীয়রা ওই সভাপতিকে উদ্ধার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওইদিন (সোমবার) রাতে মারধরের শিকার সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাদি হয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ দু’জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

 

 

এবিষয়ে তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী বলেন, আমি এক বছর ধরে অসুস্থ্য। সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানিনা এবং আমাকে জানানোও হয়নি। আমার স্বাক্ষর জাল করে সমস্ত টাকা আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার অসুস্থ্যতার খবর শুনেও একবারের জন্য দেখতে আসেননি ওই প্রধান শিক্ষক।

 

 

রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি ফিরোজ মিয়া বলেন, তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেন ওই প্রধান শিক্ষক। এনিয়ে সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাদি হয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন তিনি। এর জের ধরে ঘটনার দিন (সোমবার) ওই প্রধান শিক্ষক ও তার ভাতিজা রঞ্জু মিয়া মিলে সভাপতির উপর হামলা চালান।

 

 

সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী অসুস্থ্যতার কারণে সব কিছু ভুলে গেছেন। তার স্বাক্ষরেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সভাপতি মনিরুল ইসলামকে পেটানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমার ভাতিজা রঞ্জু মিয়ার সাথে ঘটেছে। আমি এর সাথে জড়িত নই।

 

 

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মারধরের ঘটনায় মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছেলা, ফোলা ও জখমের চিহ্ন রয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

 

এবিষয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম সরোয়ার রাব্বী বলেন, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

 

গুগল নিউজে (Google News) নবকন্ঠ২৪’র সকল খবর পেতে ফলো করুন

 

রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হবে।

 

 

এবিষয়ে রৌমারী থানার ওসি রুপ কুমার সরকার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ