বরিশাল

রক্ষা পায়নি বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়নের দুর্নীতিবাজরা!

By admin

October 18, 2023

 

* সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে নাম পরিবর্তনের চেষ্টা! * সরকারী রাজস্ব ফাঁকি! * সংগঠনের চাঁদা আত্মসাত! * অবৈধ ঋণ কার্যক্রম

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির প্রমান পাওয়ার পরও বলছেন, তারা নির্দোষ! যাদের বহিস্কার করা হয়েছে তারাই মূলত অপরাধী! এদিকে বহিস্কারকৃতরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের অর্থ নয়-ছয় করার প্রতিবাদ করায় তাদেরকে ষড়যন্তমূলক ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।

 

 

যা বরিশাল জেলা প্রশাসক ও পি.বি আই কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনই প্রমান পাওয়া গেছে কারা অপরাধী! আর এভাবেই সাধারণ সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়ন এর টাকা সরিয়ে নিয়েচ্ছেন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।

 

 

উচ্চ আদালতকে ভুল বুঝিয়ে জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনের কার্যকারিতা স্থগিত করার জন্য যায় উচ্চ আদালতে। র্দীঘদিন আইনী লড়াই শেষে স্থগিত প্রত্যার করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আদের্শ দেন দেশের সর্বচ্চো আদালত। দুর্নীতির আতুর ঘর হিসেবে পরিচিত,বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়ন। সমাজসেবা থেকে সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে ছাড়পত্র নিয়ে ক্রেডিট কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে এভাবেই বছরের পর বছর ঋণ প্রদান করে অবৈধ ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটি।

 

 

এছাড়া সদস্যদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ নামে-বেনামে ভাউচার বানিয়ে হাতিয়ে নেন সাধারন সদস্যদের চাঁদা।

 

 

২০১৫ সালের শেষের দিকে নজরে আসে সংগঠনের সচেতন বেশ কিছু সদস্যদের। পরে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক এর নজরে আনে সদস্যরা। পর্যায়ক্রমে দেশের সবোর্চ্চ আদালতে গড়ায় বিষয়টি। দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাতের প্রমান পাওয়ায় জেল হাজতে যায়, সংগঠনের সভাপতি,সহ-সভাপতি।

 

 

 

উচ্চ আদালতের নির্দেশ প্রদানের ধের মাস পার হলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি বিষয়গুলো। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে‘র এক আদেশে বলা হয়েছে, মামলার পিটিশন এর দাবীকৃত রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে দ্রুত যেনো রায়টি বাস্তবায়ন করা হয়। অন্যতয় প্রতিষ্ঠানটির সদস্যরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

 

 

 

বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়নের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করা সহ নানা অভিযোগের পাহাড় ক্রেডিট ইউনিয়ন এর একাংশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

 

 

ঘটনাসূত্র: ২০১৫ সালের শেষের দিকে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি ক্রয় করার কথা বলে সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত বিধি-উপবিধি লঙ্ঘন করে সুকৌশলে প্রতারনা করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার পাশাপাশী পরিচালনা পর্ষদকর্তৃক দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে।

 

 

সাধারণ সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে সংগঠনের একাংশ সদস্যদের পক্ষে প্রতিকার চেয়ে মি: শষ্কর চন্দ্র রায়, ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ উপ-পরিচালক সমাজসেবা অধিদপ্তর বরিশাল বরাবর অভিযোগ দায়ের করে।রেজিষ্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ একই বছরের ১৯ এপ্রিল পরির্দশন শেষে লিখিত প্রতিবেদন জমা দেন। আবেদনের বিপরীতে কোনো দৃর্শ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায়, পরবর্তীতে বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন সংগঠনের সদস্য মি: শষ্কর চন্দ্র রায় সহ ১০৭ জন সদস্য।

 

 

অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক এর নির্দেশে তৎকালীন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুখময় সরকার র্দীঘদিন তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৬টি বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমান পাওয়া গেছে বলে তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, একই বছরের ২৩ জুন সমাজসেবা অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করেছেন, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুখময় সরকার।

 

 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ০১ : বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়নের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি,সহ-সভাপতি ও সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্য বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়মে জড়িয়ে পরেছেন এ বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায়, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিধায় মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বর্তমান (২০১৬ সালের) পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে এড্হক কমিটি গঠনপূর্বক পুনরায় এজিএম আহ্বান করে নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়নপূর্বক কমপক্ষে ৫০% সক্রিয় সদস্যের উপস্থিতিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

 

 

০২ :প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র সমাজসেবা থেকে নিবন্ধন নিয়েছেন। ক্রেডিট ইউনিয়নের সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায় করে এবং সদস্যদের মাঝে ঋণ বিতরণ করেন। সরকারী নিয়মনুযায়ী সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় গ্রহণ ও ঋণ বিতরণ করতে হলে সমবায় অথবা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরটির অনুমোদন নিতে হবে। যা সমবায় সমিতি আইন/ ২০০১ (সংশোধিত/ ২০০২ ও সংশোধন আইন ২০১৩) সমবায় বিধিমালা/২০০৪ মোতাবেক অথবা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি আইন, ২০০৬ এর ১৫ (১) ধারা মোতাবেক অপরাধ মর্ম্মে বিবেচিত হবেন।

 

 

০৩ : ক্রেডিট ইউনিয়ন এর নামে ক্রয়কৃত জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন মর্ম্মে প্রমান পাওয়া গেছে, এবিষয় পরিচালনা পর্ষদ এ দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

 

 

০৪ : উক্ত ক্রেডিট ইউনিয়ন এর নামে ক্রয়কৃত জমির উপস্থিত ভবন ও দোকান ঘর ক্রয়ে সরকারের যে পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে উক্ত রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমাদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

 

 

 

০৫ : ক্রেডিট ইউনিয়নের সদস্য শংকর চন্দ্র রায়সহ যে সকল সদস্যদের অশালীন আচরণের জন্য বা অন্য কোন কারনে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে যাদের সদস্যপদ বাতিল অথবা বহিস্কার করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পর নিরপেক্ষ তদন্ত করে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

 

০৬ : ক্রেডিট ইউনিয়ন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের দুর্নীতি,অনিয়ম এবং অন্যান্য অভিযোগ তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রতীয়মান হয় যে, বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়নে একটি বড় ধরনের অনিয়ম,অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি হয়েছে, মর্ম্মে ২০১৬ সালের ২৩ জুন বরিশাল জেলা প্রশাসক এর নিয়োগকৃত তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং বরিশাল জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুখরম সরকার তার তদন্ত প্রতিবেদন এ উল্লেখ করেছেন।

 

 

পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনের কার্যকারিতা স্থগিত করার জন্য অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজ অথাৎ সংগঠনের সভাপতি মি: দানিয়েল বিশ্বাস ও সহ-সভাপতি মি: আলফ্রেড সরকার সহ পরিচালনা পর্ষদ উচ্চ আদালতে রিট করেছেন।

 

 

রিটকারীদের আবেদন পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়ন সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। আসলে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সেচ্ছা সেবী সংগঠন এর অনুমোদন নিয়েছেন।

 

 

মূলত সভাপতি মি: দানিয়েল বিশ্বাস ও সহ-সভাপতি মি: আলফ্রেড সরকার গংরা মহামান্য হাইকোর্টকে ভুল বুঝিয়ে ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করে রিট করেছেন। তৎকালীন যৌথ বিচারিক ব্র্যাঞ্চ বিচারপতি কামরুল ইসলাম ও বিচারপতি খাইরুল আলম কর্তৃক উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ৬মাসের রুল নিশি জারি করে।

 

 

এদিকে ২০১৭ সালে সাধারণ সদস্যদের পক্ষে মি: যাকোব বাড়ৈ বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সি.আর মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৩৫/১৭। বিজ্ঞ আদালত নালিশী মামলাটি আমলে নিয়ে পি.বি.আই বরিশাল কে তদন্তের নির্দেশ দেন।

 

 

পি.বি.আই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়ন এর ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৭শত ৫৭ টাকা আত্মসাত করেছেন মম্মে প্রাথমিক প্রমান পেয়েছে পি.বি.আই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা।

 

 

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর দীর্ঘ শুনানি শেষে সংগঠনের সভাপতি মি: দানিয়েল বিশ্বাস ও সহ-সভাপতি মি: আলফ্রেড সরকারকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন এবং পর্ষদের বাকি ৭ জনকে অস্থায়ী জামিন দেন। পরবর্তীতে দুর্নীতিবাজ পরিচালনা পর্ষদ হাইকোর্টে পূর্বের ন্যায় একই পন্থায় রিট করে মামলাটি স্থগিত করেছেন।

 

 

২০১৮ সালে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে দুনীর্তিবাজরা প্রতারনার নতুন কৌশল অবলম্বন করে, সমবায় অধিদপ্তর থেকে বরিশাল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি: নামে একটি সমিতির নিবন্ধন নিয়ে বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়ন এর পরবর্তী রুপ বলে প্রচারনা ও সাইনবোর্ড ব্যবহার করেন।

 

 

 

বিষয়টি সাধারণ সদস্যরা সমবায় অফিসে লিখিত আপত্তি জানালে,সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়। সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হলেও গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।

 

 

২০২২ এর ১২ জুন বরিশাল জেলা সমবায় কার্যালয় এর নিবন্ধক কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে জানান, বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়ন ও বরিশাল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি: দুইটি পৃথক প্রতিষ্ঠান। উক্ত লিখিত পত্র উচ্চ আদালত এ জমা প্রদান করা হয়।

 

 

দীর্ঘদিন পযর্ন্ত আইনী লড়াই শেষে চলতি বছরের ১৪ মার্চ বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল এর উপস্থিতিতে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট উক্ত রুল নিশি বাতিল করে ন্যয় বিচারের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকা কে নির্দেশনা প্রদান করেছেন ও প্রয়োজনে দুদক ও বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিন্ম আদালতে দায়েরকৃত মামলা হাইকোর্টে স্থগিতকৃত মামলার স্থগিতাদেশ বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত।

 

 

যার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে রায় এর কপি, বরিশাল জেলা প্রশাসক কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন ও উপ-পরিচালক সমাজসেবা বরিশাল এর বরাবর অভিযোগ পত্রের কপি সহ ঢাকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন, সংগঠনের সদস্য শংকর রায়, জেমস প্রদীপ গোমেজ ও জেভিয়ার তুহিন দাস।

 

 

বরিশাল ক্রেডিট ইউনিয়ন এর সভাপতি মি: দানিয়েল বিশ্বাস মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সাধারণ সম্পাদক মি: উইলিয়াম চন্দন দাস সময়ের বার্তাকে জানান, যারা অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলো, তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে বিধায় এখন বর্তমান পর্ষদ এর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছে। তবে সাধারণ সম্পাদক মি: উইলিয়াম চন্দন দাস সহ বর্তমান পর্ষদ এর বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ তদন্ত করে প্রমান পাওয়া গেছে সে বিষয় কোন মন্তব্য করতে নারাজ সাধারণ সম্পাদক মি: উইলিয়াম চন্দন দাস।

 

সূত্র দৈনিক সময়ের বার্তা