ঢাকা ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২২
যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেকার যুবক-যুবতীদের বিপুল পরিমাণ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। সিলেটের জকিগঞ্জের অ্যাকাউন্টস অফিসের সহযোগিতায় ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির’ দুই কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা যুবক-যুবতীদের বদলে কর্মকর্তাদের পকেটে ঢুকেছে বলে খোদ অধিদফতরের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। অথচ গত অর্থবছরে সিলেট অঞ্চলে এই কর্মসূচিই ছিল না।
এদিকে বিপুল পরিমাণ টাকা নয়ছয়ের এই ঘটনা সামনে আসার পর নতুন করে গত ২ অক্টোবর ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছে। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা অডিটে এমন আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়ার কথা স্বীকার করলেও তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর এটা নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে অনিয়ম করে টাকা উত্তোলনের জোরালো অভিযোগ যার দিকে তিনি যুব উন্নয়নের জকিগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তা মো. আজহারুল কবির। এই ঘটনা সামনে আসার পর গত একমাস ধরে তিনি কর্মস্থলেও আসছেন না বলে জানা গেছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি অডিটে এসেছে। আমরা ২ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত শেষ হোক। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যুব উন্নয়নের সিলেট বিভাগের উপপরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য ছিল বলে জেনেছি। কিন্তু হয়েছে কি না সেটা মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।’ সংস্থাটির সিলেট অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আজহারুল সাহেব হঠাৎ করে অফিসে আসা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় বোঝা যায় কিছু একটা হয়েছে।’
জানা গেছে, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় গত অর্থবছরে ৬ষ্ঠ পর্বের একটি ও ১০ পর্বের ১০টি উপজেলায় টাকা যাওয়ার কথা। উপজেলাগুলো হলো- রংপুরের মিঠাপুকুর, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, পাবনার বেড়া, যশোরের বাঘারপাড়া, ফরিদপুরের সালথা, কক্সবাজারের মহেশখালী, পটুয়াখালী সদর, মাদারীপুরের শিবচর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা। এরমধ্যে মিঠাপুকুর ৬ষ্ঠ পর্বের আওতাধীন এলাকা।
নিয়ম অনুযায়ী এই ১১ উপজেলা ছাড়া অন্য কোথাও বরাদ্দের টাকা যাওয়ার কথা না। কিন্তু সিলেটের জকিগঞ্জে দুই কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা যাওয়ায় তা উত্তোলন করে খরচও করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে ধরা পড়ে।
অধিদফতর সূত্রে গেছে, সিলেটের জকিগঞ্জে অপ্রত্যাশিতভাবে এই পরিমাণ টাকা চলে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসার পর প্রাথমিক তদন্ত করে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সেলের পরিচালক অধিফতরের মহাপরিচালকে প্রতিবেদন দেন। পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সেল) খোন্দকার মো. রুহুল আমিন গত ২১ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কাদের পকেটে এই টাকা?
প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, সিলেটের জকিগঞ্জের স্থানীয় অ্যাকাউন্টস অফিস, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংঘবদ্ধ এই বিপুল অংকের টাকা উত্তোলনে কাজ করেছে। তবে কে কে এই ঘটনায় পুরোপরি জড়িত তা এখনও প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়া অধিদফতর থেকে এই কর্মসূচিতে অর্থ ছাড়ের সুযোগ নেই। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের হিসাব বিভাগেরও অনুমোদন লাগে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট উপজেলায়ও মহাপরিচালকের সম্মতির পর টাকা পৌঁছে। এত ধাপের পরও কীভাবে এই টাকা চলে গেল, উত্তোলন হলো সে নিয়ে প্রশ্ন সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মধ্যেও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদফতরের সিলেট অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘একার পক্ষে এমন কাজ করা কোনোদিন সম্ভব না। নিশ্চয়ই কারও সেল্টারে এটা ঘটেছে। কারণ সিলেট অঞ্চলে তো গত অর্থবছরে কোনো কার্যক্রম ছিল না এই কর্মসূচির।’
আর অধিদফতরের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব কথা টেলিফোনে বলা সম্ভব না। অফিসে আসেন বিস্তারিত কথা বলা যাবে।’
যুব উন্নয়নের সিলেট বিভাগের উপপরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘গত ২৯ অথবা ৩০ সেপ্টেম্বর মৌখিক অনুমোদন নিয়ে এই কর্মকর্তা ঢাকায় গিয়েছেন। এরপর আর ফেরত আসেননি। গেলেও ফেরত আসেননি। গত ২২ অক্টোবর তার মেয়ের করোনা পজিটিভ তাই এক মাসের ছুটি চেয়ে একটি মেইল করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
এদিকে উপসচিব ফজলে এলাহীর নেতৃত্বে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যে তিন সদস্যের কমিটি করেছে তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ নিয়ে কথা বলতে চান যুব উন্নয়নের মহাপরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম খান।
আর একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মো. আজহারুল কবিরের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক