যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা, সৌন্দর্য হারাচ্ছে কুয়াকাটা

প্রকাশিত: ৩:২৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২৩

যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা, সৌন্দর্য হারাচ্ছে কুয়াকাটা
নিউজটি শেয়ার করুন

 

বরিশাল, নবকন্ঠ ডেস্ক :: দূরদূরান্ত থেকে সাপ্তাহিক বা সরকারি যেকোনো ছুটিতে হাজারো পর্যটক আসেন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা থাকায় পর্যটকরা কুয়াকাটায় একবার আসার পর দ্বিতীয়বার আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

 

 

দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতসহ উপকূলীয় এলাকার সমুদ্র বেষ্টিত চরগুলো ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি পয়েন্টে পানি, ড্রিংকসের বোতল, চিপসসহ নানা অপচনশীল পলিথিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এখানকার প্লাস্টিকে শুধু সমুদ্র সৈকতের পরিবেশই নষ্ট হচ্ছে না সমুদ্র এলাকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে।

 

 

খুলনা থেকে বেড়াতে আসা ছাব্বির আহমেদ বলেন, কুয়াকাটাতে এসে বাস গাড়ি থেকে নামার পরেই দেখি রাস্তায় পড়ে আছে ময়লা আবর্জনা ও ধুলাবালি। এরপর যখন সামনের দিকে এগোতে থাকি দেখি রাস্তার দুই পাশে ময়লা আবর্জনায় ছেয়ে গেছে। বিষয়টা আমাকে খুবই বিব্রত করেছে। এই পরিবেশ পরিবর্তন করতে হবে না হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কুয়াকাটা নিজের ঐতিহ্য হারাবে।

 

 

কুমিল্লা থেকে আগত পর্যটক সেলিনা আক্তার বলেন, আমরা আমাদের কলেজ থেকে একটি বাস গাড়ি রিজার্ভ করে কুয়াকাটায় এসেছি। কিন্তু এখানে চৌরাস্তার চারপাশে যে ময়লা আবর্জনা সেটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। রাতে যখন সমুদ্র সৈকত দেখতে যাই তখন দেখি সৈকতের কাছাকাছি যে ছোট ছোট খাবারের দোকানগুলো রয়েছে সেগুলোর চারপাশ খুব নোংরা। একবার আসার পরে আর আসতে চাইবে না কেউ।

 

 

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘুড়তে আসা পর্যটক ফিরোজ বিশ্বাস বলেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা কুয়াকাটা অনেক সুন্দর একটি জায়গা সবকিছুই বেশ সুন্দর তবে এখানে অনেক আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্য যেগুলো আমাদেরকে খুব বিরক্ত লাগে।

 

 

ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কিছুদিন আগেও আমরা সৈকতের চারপাশে প্রায় শতাধিক ময়লা রাখার বিন বসিয়েছি। এছাড়াও এখানে ৮ থেকে ১০ টি পেশার ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের মাধ্যমে ট্রেনিং করেছি। তবে সৈকতের স্ট্রিডফুটের বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে তাদের ব্যবহৃত পলিথিন সংরক্ষিত করে ডাস্টবিনে ফেললেও অনেক ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের অবহেলায় এমন পরিস্থিতি হচ্ছে।

 

 

টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সপ্তাহে একদিন আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে থাকি তাছাড়া সৈকতে ময়লা যেন না ফেলা হয় সেজন্য বারবার মাইকিং করে থাকি। আমি মনে করি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যদি তাদের নিজস্ব লোক সবসময়ের জন্য নিয়োজিত করেন তাহলে সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব।

 

 

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটায় যে বীচ রয়েছে সেই বীচ পৌরসভার আওতাধীন নয়। তারপরেও আমাদের পৌরসভার পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেওয়া আছে যারা সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন। কিছুদিন আগেও আমরা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে একটি সংস্থার মাধ্যমে ময়লা ফেলার বিন দিয়েছি। এখানে সবচেয়ে বেশি সচেতন হওয়া দরকার পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের। তাদের যত্রতত্র ময়লা না ফেলে নির্দিষ্টস্থানে ময়লা ফেলা উচিত। তাহলেই পরিবেশটি অনেক সুন্দর থাকে।

 

 

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সংকর চন্দ্র বৌদ্ধ বলেন, পর্যটকদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তারপরও স্থানীয়রা কুয়াকাটা সৈকতে যত্রতত্র ময়লাগুলোকে পরিষ্কার এবং সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সৈকতের সামনে যে অবৈধ স্থাপনা ছিল সেগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে এখন আগের চেয়ে সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ