ঢাকা ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
ঘুটঘুটে অন্ধকার! রাত তিনটা। শীতও পড়ছে বেশ! হাফেজ খানায় (হোস্টেল) সব ছাত্ররা গভীর ঘুমে নিমগ্ন। আমাদের সম্মানিত ইয়াসিন মোরশেদ (রহ.) হুজুর ডাকছে, এই ছেলেরা সবাই উঠে যাও! কয়েকবার এই বাক্যটা বলে চলে গিয়েছেন তিনি। শীতের রাতে কম্বল আর কাঁথা রেখে কে উঠতে চায়…? কিন্তু কি আর করার না উঠলে যে উত্তম-মধ্যম চলবে একটু পর। তাই উঠে অযুখানার দিকে যাচ্ছি। অযু করতে যাওয়ার সময় হুজুরের রুমের জানালাতে চোখ আটকে যায়। আমি দেখছি টিউব লাইটের আলোতে সাদা জামা পরহিত একজন ব্যক্তি সেজদায় যাচ্ছে। আমি কিছুক্ষণ ওয়েট করে দেখছি তিনি আমাদের ইয়াসিন মোরশেদ (রহ.) হুজুর।
এরকম আরো হাজারো না বলা গল্প আছে এই মহান ব্যক্তির। তিনি আমাদের নিজের সন্তানের মতো করে আগলে রেখেছিলেন। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হলো আত্মার সম্পর্ক। এটি পিতা-পুত্রের সম্পর্কের ন্যায়। পিতা-মাতা সন্তানকে জন্মদান করেন। তাকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তোলেন একজন শিক্ষক। তাইতো কবি বলেছেন—
“সকলের মোরা নয়ন ফুটাই, আলো জ্বালি সব প্রাণে
নব নব পথ চলিতে শেখাই জীবনের সন্ধানে।
পরের ছেলেরে এমনি করিয়া শেষে
ফিরাইয়া দেই পরকে আবার অকাতরে নিঃশেষে”
১৯ সালের শেষের দিকে। একদিন আমিন ফোন দিয়ে বলছে- আজ হুজুরকে দেখতে যাবো। শাহাদাৎ -জাহেদদের বলেছি। তুইও চলে আয়। বিকেল তিনটা বেজে তিরিশ মিনিট, আমি তড়িঘড়ি করে রওয়ানা দিয়েছি। চারটায় গিয়ে পৌঁছালাম। আমরা হুজুরের রুমে বসেছি। অনেক্ষণ গল্পসল্প করার পর এক পর্যায়ে শাহাদাৎ বলল – এবার আপনার বিয়েটা সেরে ফেলেন হুজুর, হুজুর মুচকি হেসে বলছে- কি বলস তোরা এগুলা, বিয়ে টিয়ে এগুলো ২০ সালের পর। আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম।
কিছুদিন পর অপরিচিত নম্বর থেকে একটা ফোন আসলো। রিসিভ করতেই ওপার থেকে বলছে আপনি নুরুন্নবী? বললাম জ্বি। আপনার ইয়াসিন হুজুর আর নেই। সন্ধায় জানাযা। আপনি চায়লে আসতে পারেন। আমারতো মনে হলো আকাশ ভেঙে পড়ছে মাথার উপর।
এইতো সেদিন হুজুরের সাথে কত গল্প-আড্ডা করে আসছি। আমি কিছুতেই মানতে পারছিলামনা। যাকগে, ভালো মানুষরা একটু আগেই চলে যায়। এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে লাগলাম।
জীবন গল্পের মতো হয়না, আবার মাঝে মাঝে জীবন গল্পের চেয়েও বেশি গল্পময় হয়। ইয়াসিন মোরশেদ হুজুরের জীবনটা এমন একটা জীবন, যেটা গল্পের চেয়েও বেশি গল্পময়।
আজকে হুজুরের তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী। এই দিনে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের আর্জি- হুজুরের স্থান যেনো জান্নাতুল ফেরদাউসে হয়। আমিন বেহুরমাতে সায়্যিদিল মুরসালিন।
লেখক: মোহাম্মদ নুরুন্নবী।
শিক্ষার্থীঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। (ইউএসটিসি)
সদস্যঃ বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক