করোনায় আক্রান্ত মাকে নিয়ে নিজের শরীরে মায়ের অক্সিজেন গ্রহণের সিলিন্ডার বেঁধে
মোটর সাইকেলে হাসপাতালে যাওয়া সেই ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলে বাসায় ফিরেছেন।
তবে তিনি একা নয়, কিংবা তার শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডারও বাঁধা ছিল না। ছিল না মায়ের মুখে লাগানো অক্সিজেন মাস্ক। বরং সেই ব্যাংক কর্মকর্তার মুখে ছিল হাসি আর মোটরসাইকেলের পেছনে ছিলেন করোনা ভাইরাস মুক্ত সুস্থ্য মা স্কুল শিক্ষিকা রেহানা পারভীন।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মাকে নিয়ে ঘরে ফেরেন ঝালকাঠি কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জিয়াউল হাসান টিটু ও তার ছোট ভাই রাকিবুল হাসান ইভান।
জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, টানা ছয় দিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে সকালে করোনা ইউনিট থেকে মাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এখন মা সম্পূর্ণ সুস্থ। যেই মোটরসাইকেলে করে মাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়েছিলাম। আজ সেই মোটরসাইকেলেই সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। এটি আমার কাছে পরম আনন্দের।
নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা গ্রামে ফেরাটা তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয়। এ যেন আল্লাহর নেয়ামত। এ সময় জিয়াউল হাসান দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়াউল হাসানের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল হাকিম মোল্লা ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের প্রথম রমজানে মৃত্যুবরণ করেন। মা রেহানা পারভীন নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড সূর্যপাশা গ্রামের বাসিন্দা।
প্রসঙ্গত, লকডাউনের মধ্যে কোনো ধরনের যানবাহন না পেয়ে গত ১৭ এপ্রিল মোটরসাইকেলে করোনায় আক্রান্ত মাকে নিয়ে নিজের শরীরে মায়ের অক্সিজেন গ্রহণের সিলিন্ডার বেঁধে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে ভর্তি হতে আসেন ছেলে জিয়াউল।
ওই সময়ে তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশি চেকপোস্টে পড়েন। পুলিশ গাড়ি না থামালেও চেকপোস্টের জন্য মোটরসাইকেলের গতি কমানোয় অক্সিজেন সিলিন্ডার শরীরে বেঁধে মাকে নিয়ে যাওয়া ছবি কেউ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।