পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দ্বীপ জেলা ভোলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে মেঘনার পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে বাঁধের বাইরের নিচু এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) মেঘনার পানি ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এসব এলাকা প্লাবিত হয়। এর আগে গত সোমবার যা ছিল বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, পূর্ণিমার প্রভাব এবং বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টর ফলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন থেকে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ৫ম দিনের মতো তলিয়ে গেছে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। জোয়ারের পানিতে বাঁধের বাইরের অন্তত ২০টি নিচু এলাকা ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ। রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
মেঘনার উপকূলবর্তী সদরের নাছির মাঝি, রাজাপুর, মনপুরার চরনিজাম, কলাতলীর চর, চরযতিন, চরজ্ঞান, চরফ্যাশনের কুকরিমুকরি, ঢালচর, চরপাতিলা, মাঝেরচর, চরশাহজালাল, কচুয়াখালীর চরসহ ২০ চর প্লাবিত হয়েছে।
ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজ মিয়া বলেন, বর্ষায় এলেই আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। বর্ষায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে কাঁচা রাস্তাঘাট ডুবে যায়। বর্ষায় পানির কারণে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারি না।
একই গ্রামের শাহজালাল শেখ বলেন, বর্ষায় আমাদের গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার অবস্থাও থাকে না। ঘরের চুলা পর্যন্ত ডুবে যায়। রান্না, খাওয়া সব বন্ধ হয়ে যায়। সরকার একটা রিংবেড়ি দিলে আমাদের এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।
ধনিয়া এলাকার বাসিন্দা এরশাদ ফরাজি বলেন, জোয়ারের পানিতে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি তলিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। বাঁধের বাইরের এসব মানুষ এক সপ্তাহ ধরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
কুকরিমুকরি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, গত শুক্রবার থেকে প্রতিদিন পানিতে কুকরিমুকরি ও চরপাতিলার বাঁধের বাইরের নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ৭ হাজার মানুষ।
ঢালচরের বাসিন্দা কামাল বলেন, রাতের জোয়ারে পানিতে ঢালচর বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, মেঘনার পানি বিপৎসীমায় প্রবাহিত হওয়ায় নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আশঙ্কা করা যাচ্ছে।