বাবা-মায়ের বুকে ফিরে যা বললেন সেই রায়হান কবির

প্রকাশিত: ২:৪৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০

নিউজটি শেয়ার করুন

মালয়েশিয়ায় পুলিশের রিমান্ডে ২৭ দিন একই জামাকাপড়ে কেটেছে রায়হান কবিরের। হাতকড়া পরিয়েই পুলিশ তাঁকে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অতিক্রম করায়। এ সময় এক বাঙালি রায়হানকে একটা শার্ট এনে দিলে গায়ের ময়লা জামাটি পরিবর্তন করে নেন তিনি। মালয়েশিয়ায় পুলিশ তাঁর সঙ্গে ভালো আচরণ করলেও দিনগুলো কেটেছে মানসিক চাপের মধ্যে। তবে তাঁকে যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, বিমানবন্দরে আসার আগ পর্যন্ত জানতেন না রায়হান।

প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়া রায়হান মালয়েশিয়া থেকে দেশে পরিবারের কাছে ফিরে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো জানান। এর আগে আজ শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার শাহি মসজিদ এলাকায় নিজ বাসায় ফেরেন তিনি।

রায়হান নিজ বাসায় ফিরে আসার পর অন্যরকম পরিবেশের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সন্তানকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মা রশিদা বেগম। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছেন। ছেলে ফিরেছে এমন আনন্দে আত্মহারা তিনি।

রায়হানের বোন জানান, ভাইয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি দেশে আসবেন শুনে মা অনেকটা সুস্থ হয়ে যান। অপেক্ষা করতে থাকেন। ভোর রাতে ভাই বাড়িতে এসেছে। মা তার ছেলের জন্য পছন্দের সব রান্না করে রাখে। গরুর গোশত, দেশী মাগুর মাছ, কই মাছ, আম দিয়ে ডাল ও কয়েক পদের ভর্তা বানিয়ে রাখে।

জানতে চাইলে রায়হান বলেন, ‘আপনারা সবাই দেখেছেন, আমি আলজাজিরায় কী বলেছি। বলার মতো তেমন কিছুই বলিনি। শুধু প্রবাসীদের ওপর, আমার দেশের মানুষের ওপর, যেকোনো দেশের মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কারদের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, শুধু সে বিষয়ে বলেছি। হিউম্যান রাইটস বলতে যে ব্যাপারটি আছে, মানুষের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা উচিত, সে ব্যাপারে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে আমি আমার মতামত দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে রায়হান আরো বলেন, ‘আমি তোমার দেশে (মালয়েশিয়া) কাজ করতে যাই, এর মানে এই নয়, আমি তোমার দেশের গোলাম। তুমি আমার দেশে আসতে পারো, আমি তোমার দেশে যেতে পারি। এটা গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি। একুশ শতকে এসে কেউ বলবে না, আমি ওই দেশে কাজ করতে যাই। তার আমাকে প্রয়োজন। সে আমার মেধা, আমার শ্রম কিনে নিচ্ছে এবং এর বিনিময়ে আমি তার কাছ থেকে অর্থ পাচ্ছি। তাই মানুষ হিসেবে সবার প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত। যে বিষয়গুলো আমার কাছে খারাপ লেগেছে, আমি অতটুকই তুলে ধরেছি।’

মালয়েশিয়ার পুলিশ ভালো আচরণ করেছে উল্লেখ করে রায়হান কবির বলেন, ‘পুলিশ আমার প্রতি সদয় ছিল। পুলিশ জানত আমি নির্দোষ। জানত যে, এটা কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স নয়। তাই পুলিশও আমার প্রতি সদয় ছিল। তারা আমার সঙ্গে খুব সুন্দর ব্যবহার করেছে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে রায়হান বলেন, ‘আপাতত মানসিক শান্তি প্রয়োজন। এখন কিছু ভাবছি না। পরে চিন্তা করব, কী করা যায়। যোগ্যতা আছে, মেধা আছে, কিছু একটা হয়ে যাবে।’

এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের এমএইচ-১৯৬ ফ্লাইটে ঢাকায় নামেন রায়হান। বিমানবন্দরে প্রিয় ছেলেকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা শাহ আলম। বাবা-ছেলের পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে থাকার সেই ক্ষণটি স্পর্শ করবে যে কাউকে। কোনো কোনো কান্নায় কতোটা আনন্দ থাকে সেটা কাছে না থাকলে বোঝা যায় না।

বিমানবন্দরে রায়হানের বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কবে আমাদের রায়হান আমাদের কাছে আসবে। আজ রায়হান এসেছে। আমরা ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছি। এই আনন্দ বুঝিয়ে বলতে পারব না।’

কেমন লাগছে? রায়হান কবিরের ঝটপট উত্তর, ‘এই আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। গত ছয় বছরে কতোবার যাওয়া-আসা করেছি। এবার অন্যরকম অনুভূতি। আমার বাংলাদেশ। আমার মাটি। আমার বাবা-মা। এই আনন্দ কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। দেশে-বিদেশে-প্রবাসে যারা পাশে ছিলেন, সবার কাছে কৃতজ্ঞতা।’

রায়হানের আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা জানান, শুক্রবার রাতে পুত্রজায়া ইমিগ্রেশন অফিস থেকে রায়হানকে সরাসরি বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সব প্রক্রিয়া শেষ করে মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় তাকে বিমানে তোলা হয়। এর আগে, করোনার পরীক্ষায় তার নেগেটিভ প্রতিবেদন আসে। যেহেতু রায়হানের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া পুলিশ কোনো অভিযোগ আনেনি, কাজেই তাকে কোনো আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না।’


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ