ঢাকা ৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২১
বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫২৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে ২১ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৬৩৮ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, যে হারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিল তাতে আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু আমাদের চহিদাপত্রের ভিত্তিতে বুধবার (২১ এপ্রিল) স্বাস্থ্য দফতর থেকে ৩৫ হাজার পিস স্যালাইন পেয়েছি। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিভাগীয় কমিশনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক হাজার পিস স্যালাইন দেবেন। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের দেওয়া স্যালাইনগুলো নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আপতত সংকট হবে না।
ডা. বাসুদেব কুমার দাস আরও বলেন, হঠাৎ করে ডায়রিয়া দেখা দেওয়ায় অনেক স্থানে পরিস্থিতি সামাল দিতে কষ্ট হয়েছে। তবে যেভাবেই হোক চিকিৎসা না নিয়ে কোনো রোগী বাসায় ফেরেনি। স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন সব রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদ এএসএম আহসান কবির জানান, উপকূলীয় জেলাসমূহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে দ্বীপ জেলা ভোলায় ২১ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৪৬০ জন। তবে ভোলা জেলায় এখন পর্যন্ত কেউ মৃত্যুবরণ করেনি। আক্রান্তে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী। এই জেলায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই জেলায় মোট দুইজন ডায়রিয়া আক্রন্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে আরেক উপকূলীয় জেলা বরগুনা। এই জেলায় মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ১৭০ জন। মারা গেছেন দুইজন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে বরিশাল জেলা। এই জেলায় মোট আক্রান্ত ৪ হাজার ৫৯১ জন। মারা গেছেন সর্বোচ্চ চারজন। এছাড়াও পিরোজপুরে ৪ হাজার ১৩৫ জন ও ঝালকাঠিতে ৩ হাজার ৬৩৬ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বিভাগের ৪০টি উপজেলার মধ্যে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়া ১৮টি এলাকায় ৪০৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে গবেষক টিম এসে কাজ শুরু করে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নদী বিধৌত এই অঞ্চলের মানুষ টিউবয়েলের পানি পান করলেও অধিকাংশ মানুষ খাল, নদী বা ডোবার পানি রান্না ও থালা বাসন ধোয়ার কাজে ব্যবহার করেন। ফলে ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেশি।
আইইডিসিআরের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বরগুনা জেলায় ৯৪ শতাংশ মানুষ টিউবয়েলের পানি পান করেন। অথচ ৭১ শতাংশ মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র খাল, নদী, পুকুর বা ডোবার দূষিত পানিতে ধুয়ে থাকেন। ফলে ৯৪ শতাংশ মানুষ টিউবয়েলের পানি পান করে নিরাপদ থাকলেও তাদের ৭১ শতাংশ মানুষ যখন দূষিত পানিতে বাসন-কোসন ধুচ্ছে তখন ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে।
এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমার অভিজ্ঞতায় নব্বই দশকের পর এত বেশি ডায়রিয়ার সংক্রমণ এ বছর দেখলাম।
এদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বিভাগের ৪০টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চরম বেড সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গাছের নিচে, খোলা মাঠে সামিয়ানা টানিয়ে বা প্যান্ডেল করে অস্থায়ী হাসপাতাল করা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। রাতের পর রাতও থাকতে হচ্ছে অনেককে।
জানা গেছে, চলতি মাসের ২১ দিনে ৩১ হাজার ৬০৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক