ঢাকা ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২২
পটুয়াখালীতে পুলিশের গাফিলতিতে সুশান্ত শীল (৩৬) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিলকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পাঁচ দিন পর নিহতের পরিবার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন গলাচিপা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী ব্যবস্থাপক মাঈনুদ্দিন।
সমিতির সহকারী ব্যবস্থাপক বলেন, সুশান্তর বিরুদ্ধে পল্লী বিদ্যুতের মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল। এদিকে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ হয়রানিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের। মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা এড়াতে দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছে থানার ওসি।
গত ১৩ জানুয়ারি জেলার গলাচিপা উপজেলার রতনদি তালতলি ইউনিয়নের কাছারিকান্দা গ্রামে এমন ঘটনা ঘটে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে ধরতে যাওয়া এএসআই নেছার উদ্দিনের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নিহত সুশান্ত শীলের স্ত্রী কানন রানী ও ছেলে সৌরভ শীল বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি বিকালে সাদা পোশাকে গলাচিপা থানার এএসআই নেছার উদ্দিন ও একজন কনস্টেবল পরিচয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে সুশান্তকে খোঁজ করে। এ সময় পুলিশের কাছে খোঁজার কারণ যানতে চান তারা। কোনো কথা না শুনে সুশান্ত ও ছেলে সৌরভকে থানায় নিয়ে যেতে চায় পুলিশ।
ওয়ারেন্ট হয়েছে বাবার বিরুদ্ধে, সৌরভকে কেন থানায় যাবে, জানতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে সৌরভকে ডাকাতি মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়। ঘণ্টাব্যাপী বাগবিতণ্ডা শেষে বাবা-ছেলেকে নিয়ে থানার উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ।
সুশান্তর বাড়ি থেকে রাস্তায় উঠে সুশান্তকে মোটরসাইকেল চালাতে দিয়ে পেছনের সিটে বসে পুলিশ। আরেকটি মোটরসাইকেলে উঠে সৌরভ। দেওয়ানবাজার অতিক্রমকালে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সুশান্ত। ওই দুর্ঘটনার পর সুশান্ত অসুস্থ হলে বাবা-ছেলেকে ঘটনাস্থলে রেখে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
পরে অসুস্থ সুশান্তকে নিয়ে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশালে রওনা হয়। কিন্তু শাখারিয়া পর্যন্ত পৌঁছলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সুশান্ত।
সুশান্তর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ এবং ভয়ভীতিতে সুশান্ত হার্টঅ্যাটাক করেন। সুশান্তর লাশ নিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় চেয়ারম্যানের ছেলে শাকিল খানের সহযোগিতায় পুলিশ সুশান্তর বৃদ্ধ মা সীতা রানীকে বাড়ি থেকে থানায় তুলে নিয়ে কাগজে স্বাক্ষর রেখে লাশ দ্রুত সৎকারের পরামর্শ দেয়। পর দিন ১৪ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় তাকে সৎকার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমআর শওকত আনোয়ার বলেন, সুশান্ত ব্যক্তিগত কাজে বাড়ি থেকে উপজেলায় আসার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন। লাশের ময়নাতদন্ত হবে কি না- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, নিহতের পরিবারের আবেদনে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তর হয়েছে।
দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া সৎকারে সিভিল প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রসঙ্গে ওসি বলেন, কেউ ময়নাতদন্ত না করতে চাইলে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ লাশ হস্তান্তর করতে পারে। আইনে পুলিশকে এমন ক্ষমতা দেওয়া আছে।
এদিকে ১৮ জানুয়ারি দুপুরে সুশান্তের স্ত্রী কানন রানীর কাছ থেকে পুলিশ দ্বিতীয় দফা কাগজে স্বাক্ষর নিতে গেলে আরও আতঙ্কিত হয় পরিবারটি।
স্বাক্ষরের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়— সেদিন পরিবারের দিকে তাকিয়ে দ্রুত লাশ হস্তান্তর হয়েছে। বাকি আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য পরে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সিভিল প্রশাসনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত হলে ওই লাশের মালিক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ নয়।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনো অভিযানকালে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে দিয়ে যানবাহন চালাতে দেওয়া আইনসিদ্ধ নয়।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক