ঝালকাঠী

নলছিটির মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

By admin

March 29, 2022

 

নবকন্ঠ ডেস্ক, বরিশালঃ ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ কবির খানের বিরুদ্ধে উন্নয়নকাজের চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।পৌরসভার ছয় কাউন্সিলর এই অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ ১২টি দপ্তরে মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাটের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পৌরসভার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান নামের এক বাসিন্দা।

 

কাউন্সিলরদের অভিযোগ, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম, কর্মচারী গোলাম মোস্তফা, মিরাজুল ইসলাম প্রিন্স ও সাবেক পৌরসচিব রাশেদ ইকবালকে নিয়ে উন্নয়ন বরাদ্দের চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ কবির খান।

 

নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুধু উন্নয়ন বরাদ্দই নয়, সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া ৪৩ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের নলছিটি শাখা থেকে কৃষি ব্যাংকে স্থানান্তর করে পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন মেয়র। ওই টাকা কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তার কোনো হিসাব কাউন্সিলরদের দেখাতে পারেননি মেয়র।’

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সঙ্গে কথা হয় নলছিটি পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী, ফিরোজ আলম খান, রেজাউল চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম টিটু এবং ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর দিলরুবা বেগমের সঙ্গে। তারা মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সত্য বলে জানান।

 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ ১২ দপ্তরে মেয়রের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগে সাইদুর বলেন, নলছিটি পৌরসভায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু নিধনে বরাদ্দ ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, করোনায় স্বাস্থ্যসামগ্রী বিতরণের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মেয়র আত্মসাৎ করেছেন।

 

খাতওয়ারি অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, তিনি ৯ প্রকল্পের বিশেষ বরাদ্দের ২৫ লাখ টাকা, উন্নয়ন বাজেটের ২৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা, পৌরসভার বিশেষ বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা, নগর উন্নয়ন প্রকল্পের ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন, জলবায়ু প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকা এবং করোনার দ্বিতীয় বরাদ্দের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার নামমাত্র কাজ করে আত্মসাৎ করেছেন।

 

পৌর কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী বলেন, ‘যেসব প্রকল্পে টাকা দেয়া হয়েছে, সেসবের বাস্তবায়ন জনগণ দেখেনি। করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ ও ডেঙ্গু নিধনে ওষুধ বিতরণ হয়েছে নামমাত্র। বাকিটা হয়েছে হরিলুট।

 

কাউন্সিলর রেজাউল চৌধুরী বলেন, ‘নগর উন্নয়ন প্রকল্পে সাতটি রাস্তা নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও ৩টির ২০ ভাগ কাজ হয়েছে। বাকি চারটি রাস্তার কোনো কাজ না করেই বিল তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

 

অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর ফিরোজ আলম খান বলেন, ‘জলবায়ু প্রকল্পের বরাদ্দ ২ কোটি টাকার অনকূলে ১৫০টি স্ট্রিট লাইট ও ৫০টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ ছিল। এখানে ৮টি গভীর নলকূপ ও ১৫টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন করে বরাদ্দের বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

 

আরেক কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘৭ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার কাজ না করে বিল তোলায় আমি মেয়রকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের সব মিলিয়ে ৪ কোটি টাকার কোনো কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

 

কাউন্সিলর দিলরুবা বেগম বলেন, ‘১ নম্বর প্যানেল মেয়র টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক। তার সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই সব টেন্ডার সম্পন্ন করেছেন মেয়র ওয়াহেদ।

 

সরকারি বরাদ্দের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেয়র ওয়াহেদ কবির খান। বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মিথ্যে অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। কাজ না করে বিল ওঠানো এবং হিসাব না দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। অনেক প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।