ঢাকা ৪ঠা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
ঝালকাঠিতে আরাফ ও আয়ান নামের ১৬ মাসের যমজ ছেলেসন্তানকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেলেন এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রী। স্বামী ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন না করায় রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শিশু দুটিকে রেখে চলে যান মা।
থানা সূত্রে জানা যায়, শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন কাঁঠালিয়া থানায় পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমানে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন।
তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে। ২০১৯ সালের মে মাসে সদরের খাওক্ষির গ্রামের সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে কনস্টেবল ইমরানের বিয়ে হয়। দাম্পত্যকলহের জেরে এ বছরের মার্চ মাসে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
বিচ্ছেদের সময়ের সিদ্ধান্ত মতে, শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য পুলিশ কনস্টেবল ইমরান প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা দেবেন। কিন্তু শিশু দুটির মা সুমাইয়ার দাবি, বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে তার সন্তানদের কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছেন না ইমরান।
এসপি কার্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানি মাহফুজ মিয়া বলেন, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে এক নারী দুই শিশুসন্তানকে চেক পোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে যান। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান, ‘তোমাদের সন্তান তোমাদের কাছেই থাক।’
বিকেলে ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু দুটির কান্নায় থানার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের এক নারী কনস্টেবল শিশু দুটিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সময় শিশু দুটির শরীরের তাপমত্রা ছিল অনেক বেশি।
মা সুমাইয়া আক্তার জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু আরাফ ও আয়ান ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। রোববার সকালে চিকিৎসকরা শিশু দুটির বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করতে বলেন। এতে প্রায় ৬ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল।
বিষয়টি কনস্টেবল ইমরানকে জানানো হলেও তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি বিচ্ছেদের পর একবারের জন্যও তার সন্তানদের খোঁজ নেননি তিনি। তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতের জন্য যাই।
কিন্তু প্রধানফটকের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমরান মিয়া ও মো. সুমন নামে দুই পুলিশ সদস্য ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। তাই বাধ্য হয়ে শিশুসন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে এসেছি বলে জানান তিনি।
কনস্টেবল ইমরান জানান, প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য ৩ হাজার টাকা সুমাইয়ার ব্যাংক হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের খোঁজখবর নেই। কিন্তু মা হয়ে তিনি কীভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেলেন?
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি পারিবারিকভাবে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। শিশুটির দাদা-দাদিকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা আসলে শিশু দুটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক