ঝালকাঠিতে শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে রোববার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ এলাকা থেকে মোবারক আলীকে গ্রেফতার করে ঝালকাঠি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি ডিবি) মো. সেলিম উদ্দিন।
ঝালকাঠি জেলা পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে তিনি এ তথ্য প্রদান করেন। এর আগে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন এলাকায় তালগাছ কেটে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুর রহমান।
শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ও প্রজননের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল তালগাছটি শুক্রবার বিকালে একদল পাষণ্ড ব্যক্তি কেটে ফেলে।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুর রহমান জানান, বাবুই পাখি হত্যার বিষয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ঝালকাঠি সদর থানায় মোবারক আলী, মিজানুর রহমান এবং ফারুক হোসেনকে আসামি করে ৩৭৯ নং ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি ডিবি) মো. সেলিম উদ্দিন জানান, গত ২৭ জুন ঝালকাঠি সদর থানাধীন শেখেরহাট ইউনিয়নের পূর্ব গুয়াটন এলাকায় একটি তালগাছ কাটা হয়। ওই গাছের ডগায় ডগায় পাতার সাথে ঝোলানো ছিল বহু বাবুই পাখির বাসা। এসব বাসায় ছিল শতাধিক ছানা ও ডিম। কিছু দুষ্কৃতকারী তালগাছটি কাটার ফলে পাখির ছানা ও ডিম পানিতে পড়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু পাখি উড়ে গেলেও শতাধিক ছানা মারা যায় এবং ডিমগুলো ভেঙে যায়।
এই গাছটি ছিল ওই এলাকার বাবুই পাখির আশ্রয় ও প্রজননস্থল। ফলে গাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। পরবর্তীতে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ২৯ জুন ওই বিষয়ে মামলা রুজু হওয়ার পর বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশনায় ঝালকাঠি জেলার পুলিশ সুপারের পরিকল্পনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহার নামীয় প্রধান আসামি মো. মোবারেক আলী ফকিরকে (৬৫) পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
তিনি গুয়াটন এলাকার মৃত মোসলেম আলী ফকিরের পুত্র। আসামিকে আদালতে প্রেরণ এবং ঘটনার সহিত জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ডিবি ওসি।
স্থানীয়রা জানান, মোবারেক আলী ফকিরের মালিকানাধীন জমির তালগাছটিকে দীর্ঘদিন ধরে বাবুই পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। এ গাছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা, ডিম ও ছানা ছিল। গাছটি মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি কিনে কাটার ফলে শতাধিক ছানা ও ডিম ধ্বংস হয়ে যায়। এই বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসী মর্মাহত।
জাহিদ হোসেন নামে স্থানীয় একজন ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, এই তালগাছটি শুধু একটি গাছ ছিল না, একটি প্রাণী বৈচিত্র্যের কেন্দ্র ছিল। যারা এই কাজ করেছে, তারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।