গলাচিপায় অর্ধকোটি টাকার সেতু পার হতে লাগে সাঁকো

প্রকাশিত: ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০২১

গলাচিপায় অর্ধকোটি টাকার সেতু পার হতে লাগে সাঁকো
নিউজটি শেয়ার করুন

 

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকন্দিকান্দি-গজালিয়া ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনকারী সেতু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ কালভার্ট সড়ক থেকে একদম বিচ্ছিন্ন। সেতুতে উঠতে গেলে ব্যবহার করতে হয় বাঁশের সাঁকো। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, চিকন্দিকান্দি-গজালিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের যাতায়াত সুবিধার্থে ও দুর্ভোগ কমাতে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় দুটি বক্স কালভার্ট। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়।

 

একই খালে ১০০ মিটার দূরত্বে নির্মিত দুটি কালভার্ট জনসাধারণের ন্যুনতম উপকারে আসেনি বলে দাবি এলাকাবাসীর। খালের মাঝখানে নির্মাণ করা সেই কালভার্ট দুটি এখনো সড়ক থেকে বিচ্ছিন্নই রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত দুইটি কালভার্ট ব্যবহার করতে স্থানীয়ভাবে স্থাপন করা হয়েছে চারটি বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো সংযুক্ত সেতু পার হতে অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হয় নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চিকন্দিকান্দি-গজালিয়া সীমান্তে ১১০ ফুট প্রশস্ত পানখালি খালের অবস্থান। এলাকাবাসীর দাবির ভিত্তিতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের হানিফ মেম্বারের স-মিল সংলগ্ন ওই খালের উপরে কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় গলাচিপা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়। মাত্র ১০০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয় ওই খালের উপরে।

 

একটি কালভার্ট নির্মাণের পর থেকেই পরিত্যক্ত রয়েছে। পরিত্যক্ত ওই কালভার্টটি মাঝে মধ্যে স্থানীয় কৃষকরা কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। অপর কালভার্টটির গুরুত্ব থাকলেও তা ব্যবহারে শতভাগ অনুপযোগী।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন জানান, ১১০ ফুট প্রশস্ত খালের উপরে মাত্র ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে কালভার্টের দুই প্রান্ত থেকে মূল সড়কে অন্তত ৮০ ফুট ফারাক থেকে যায়। তাই সনাতন পদ্ধতির সাঁকো দিয়ে সেতুতে উঠতে হচ্ছে মানুষজনকে। এছাড়া মাঝে মধ্যে সাঁকো ভেঙ্গে বিপদে পরেছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

 

স্থানীয় ইউসুব হাওলাদার বলেন, দুই বছর আগে একই স্থানে দুটি কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে। ১১০ ফুট চওড়া খালের উপরে ৩০ ফুট কালভার্ট হওয়ার ফলে সেটি সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। একই স্থানে দুটি না হয়ে ওই টাকা দিয়ে একটি নির্মাণ হলে অন্তত এলকাবাসী কালভার্টের সুবিধা ভোগ করতে পারতো।

 

আমির হাওলাদার বলেন, জনগণের ভোগান্তির জন্য কালভার্ট (সেতু) হয়েছে। কিন্তু জনগণ এর সুফল পায়না। নির্মাণকালে বারবার আপত্তি দেওয়া সত্ত্বেও অফিসার ও ঠিকাদার আমাগো কথায় কান দেয়নি।

 

স্থানীয় পানখালির মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আতিক বলেন, খালের প্রশস্ত অনুযায়ী দরকার ছিল সেতু। সেখানে দেওয়া হয়েছে বক্স কালভার্ট। খালের এপাড়-ওপাড় স্কুল ও মাদ্রাসা মসজিদ রয়েছে। তাছাড়া দুই ইউনিয়নের হাজারও মানুষ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সরকার সেতু দিয়েছে। আর এই সেতু আমরা এখনো সাঁকো দিয়ে পাড় হই।

 

স্থানীয় শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, প্রতিদিন এভাবেই কষ্ট করে আমাদের এক হাতে বই আর এক হাতে সাঁকোর বাঁশ ধরে পাড়ি দিতে হয়। আমি গত কদিন আগে পারাপারের সময় সাঁকো থেকে নিচে পরে আমার বুকে, হাতে ও পেটে ব্যথা পেয়েছি, এখনও হাঁটতে পারি না। এছাড়াও প্রায়ই সময় সাঁকো থেকে অসংখ্য লোকজন পড়েন।

 

স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িঘর, হাট-বাজার, কর্মস্থল বা শিশুদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যেতে প্রত্যেককে বাঁশের সাঁকো বেয়ে পার হতে হয়। আর পার হতে গিয়ে কখনো কেউ হয়েছেন রক্তাক্ত, ভেঙেছেন হাত-পা বা কারো কোমর।

 

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, ওই প্রকল্প আমি এখানে যোগদানের আগেই হয়েছে তাই আমি অবগত নই। এখন যেহেতু বৃষ্টিপাত হচ্ছে আবহাওয়া খানিকটা অনুকূলে আসলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ