কলাপাড়ায় কাজে আসছে না ৩ কোটি টাকার ব্রিজ!

প্রকাশিত: ১০:০৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০২২

কলাপাড়ায় কাজে আসছে না ৩ কোটি টাকার ব্রিজ!
নিউজটি শেয়ার করুন

 

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নে মধুখালী খালে ওপর নির্মিত গার্ডার ব্রিজের মূল কাজ শেষ হলেও এখন সংযোগ সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে কৃষক ও সাধারন মানুষ।

 

মধুখালী খালের ওপর লোহার অবকাঠামোর তৈরি একটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর তা ভেঙ্গে এখন নতুন একটি গার্ডার ব্রীজ তৈরি করার উদ্যোগ নেয়‍া হয়।

 

 

স্থানীয় প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, নতুন করে যে ব্রীজটি নির্মিত হচ্ছে তা লম্বা ৪৫মিটার। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্প এর মাধ্যমে ব্রিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছে পটুয়াখালীর ঠিকাদার প্রতিষ্টান মেসার্স কাশেম কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স পল্লী স্টোর্স। প্রতিষ্টান দুটি ঠিকাদার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর ২০০১৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

 

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, গার্ডার ব্রিজের মূল কাজ শেষ হয়েছে। পশ্চিম পাশের সংযোগ সড়কের জন্য বালু ফেলা হয়েছে। কিন্তু পূর্ব পাশে বালু ফেলার কাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে সব কাজ বন্ধ রয়েছে।

 

 

 

দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী নির্মান কাজ শেষ করা কথা ছিল ২০১৯ সালে। দরপত্র অনুযায়ী এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২৭লক্ষ ৩৩ হাজার ৯শত ৭৫ টাকা। ২০১৯ সালের শেষ হওয়ার নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু এখন ২০২২ সালে এখনও পর্যন্ত কাজটি সমাপ্ত করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্টান।

 

 

এরই মধ্যে দুই দফা সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু এখন কবে নাগাদ এটির কাজ শেষ হবে তা কলাপাড়ার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ডিপার্টমেন্টও নিশ্চিত করে জানাতে পারেন নি। আর এভাবে ব্রিটির কাজ বন্ধ থাকার ফলে মানুষের দূর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এর ফলে আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।

 

 

নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় মিঠাগঞ্জের মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। পূর্বমধুখালী আর পশ্চিম মধুখালীসহ আশপাশের দশ গ্রামের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মানুষ।

 

 

স্কুলগামী শত শত শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করছে এ পথে। কাঠের পাটাতনের ওই সাঁকোটিও ভেঙ্গে বড় ধরণের দূর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। নিত্যকার এ দূর্ভোগ নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তর শেষ নেই।

 

 

অস্থায়ী ভিত্তিতে কাঠের পাটাতনের একটি নড়বড়ে সেতু দিয়ে হেঁটে চলাচল করছে মানুষ। তাও এখন জীর্ণদশায়, ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ দুই বছর।

 

 

গার্ডার ব্রিজের সংলগ্ন রয়েছে মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মধুখালী দাখি মাদ্রাসা, মধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরা। মধুখালী গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, সেতুর এ অবস্থায় কারনে কৃষকেরা বাজারে নিয়ে তাদের উৎপাদিত ধান, সবজি বিক্রি করতে পারছে না।

 

 

মানুষ মালামাল পারাপার করতে পারছে না। বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে শিশু-বয়স্ক মানুষকে নিয়ে পার হতে কষ্ট হয়। গ্রামের মানুষের কী যে ভোগান্তি তা বলে শেষ করা যায় না।

 

 

মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো, আক্তারুজাম্মান বলেন, গার্ডার ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই। আমার বিদ্যালয় ছেলে/মেয়েরা আসতে চায় না। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বাঁশের ভেঙ্গে কয়েকবার খালে পড়ে গেছে। বই খাতা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। আমার দাবি ছাত্রী-ছাত্রীদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ব্রিজটি বাকী অংশ করার জোড় দাবী জানান।

 

 

পটুয়াখালীর ঠিকাদার প্রতিষ্টান মেসার্স কাশেম কনস্ট্রাকশনের মালিক গোলাম সরোয়ার (বাদল) বলেন, গার্ডার ব্রিজের কাজ এখন প্রায় শেষ পথে। কিন্তু এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ বাকি আছে। এক পাড়ে এ্যাপ্রোচ সড়ক করতে গেলে পুকুর পার দিয়ে করতে হয়। এলজিইডি সাইট কালেকশন ছিল ভুল। পুর্বের সেতুর জায়গায় দিয়ে এ সমস্যা হতো না। এখন এলজিইডি অফিস এ সমস্যা কি করে তা আমি জানি না।

 

 

কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমোক্তযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের কাছে মধুখালী সেতুর নানা অনিয়মের কথা বলছি তার পর তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে পাঠান। তিনি যা দেখেছেন তা প্রতিবেদন দিবেন।

 

 

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের(এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. মহর আলী জানান, মধুখালী খালে ওপর নির্মিত গার্ডার ব্রিজের কাজ ঢিমেতালে চলছে। গার্ডার বসানো হয়েছে। স্পানও বসানো হয়েছে। এপ্রোচ এখন বাকি আছে।ঠিকাদারকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান। এখন কবে নাগাদ এ কাজটি প্রকৃত অর্থে সম্পন্ন হবে তা এই দফতরও নিশ্চিত করতে পারেনি।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ