একভাই নিজেকে পরিচয় দিতেন এসপি, অন্যভাই ওসি!

প্রকাশিত: ৩:০৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০

একভাই নিজেকে পরিচয় দিতেন এসপি, অন্যভাই ওসি!
নিউজটি শেয়ার করুন

সিলেট : সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কাজিবাড়ি গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের দুই ছেলে কাজী অপু ও কাজী টিপু। অপুর বয়স ৩৫, টিপুও কাছাকাছি বয়সের। বয়স চল্লিশ না পেরোলেও এই বয়সেই ওরা দুই ভাই প্রতারণায় হয়ে উঠেছেন সিদ্ধহস্ত।

 

একটি মোবাইল ফোন নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে তার প্রোফাইলে রেখেছেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছবি। এ নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে অনেকের চাঁদা দাবি করেন দুই ভাই। এক ভাই নিজেকে পরিচয় দেন পুলিশ সুপার, অপরজন পরিচয় দেন ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, দু’ভাইয়ের মধ্যে অপুকে পাকড়াও হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। অপরজনকে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ।

 

অপুকে আটকের পর বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

 

তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ফেঞ্চুগঞ্জ থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে কাজী অপু মিয়া (৩৫) গ্রেপ্তার করে। তবে তার ভাই কাজী টিপু মিয়াকে গ্রেফতার করা যায়নি, তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ।

 

এসপি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, প্রবাসী ফেঞ্চুগঞ্জের রাজনপুর গ্রামের মৃত শেখ রুনু মিয়ার ছেলে দুবাই প্রবাসী শেখ মোরশেদ আহমদ (৩৩)-এর কাছ থেকে প্রতারণা করে কাজী অপু ও তার ভাই কাজী টিপু এবং তাদের সহযোগিরা ২৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মোরশেদ বাদি হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ কাজী অপুকে গ্রেপ্তার করে।

 

পুলিশ জানায়, শেখ মোরশেদ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন। দেশে আসার পর তার সঙ্গে একদিন কাজী অপু মিয়া ও কাজী টিপুর আলাপ-পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে গত জুন মাসে অপু ও টিপু প্রবাসী শেখ মোরশেদ আহমদকে গাড়ি ক্রয়ের প্রলোভন দেখায়। ওই সময় অপু ও কাজী টিপুর মাধ্যমে বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে মোরশেদ ১৯ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৩টি মাইক্রোবাস (নোহা) গাড়ি ক্রয় করেন।

 

এদিকে, ক্রয়কৃত গাড়িগুলোর কাগজপত্র হালনাগাদ ছিলো না এবং বিক্রির কোনো বায়নামাও করেনি দুই ভাই। কাগজপত্র ঠিকঠাক করে দেয়ার কথা বলে এক পর্যায়ে অপু ও টিপু গত ৩০ জুন মোরশেদের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু দিনের পর দিন তারা মোরশেদকে কাগজপত্র না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করে। পরবর্তীতে মোরশেদ মিয়ার অবিরাম তাগাদায় গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় অপু মিয়া মোরশেদের নিকট ১টি নোহা গাড়ি (রেজি নং-ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৩০২১)-এর বায়নামাপত্রের ফটোকপি প্রদান করে।

 

ওই বায়নাপত্রে সিলেট বিআরটিএ অফিসের সিল, মোছা. দিলরুবা আক্তার নামের এক কর্মকর্তার স্বাক্ষর, ফেঞ্চুগঞ্জ থানার (ভুয়া) এসআই শামীম এবং থানার ওসিসহ অনেকের স্বাক্ষর জাল করে বসিয়ে দেয় অপু ও টিপু।

 

মোরশেদের মনে সন্দেহের উদ্রেগ হলে বায়নাপত্র যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখেন- সবকিছু জাল। এছাড়াও ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় শামীম নামে কোনো এসআই কর্মরত নেই। বিষয়টি বিশাল প্রতারণা বুঝতে পেরে মোরশেদ ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপু ও টিপুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৫ (২/৯/২০২০)।

 

এর আগে গত ২৩ আগস্ট বেলা ২টায় অপু তার এক সহযোগিকে দিয়ে ০১৭১৬-৮৩৯০৮১ নাম্বার থেকে মোরশেদের ব্যবহৃত নাম্বার ০১৭১২-৪৫১১৫৬-এ কল করে নিজেকে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার পরিচয় দেয় এবং কিছুদিনের মধ্যে তার গাড়ির নাম্বার প্লেট প্রদান করা হবে জানায়।

 

শুধু তাই নয়, ০১৭১৬-৮৩৯০৮১ এই মোবাইল নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন ও তার পারিবারিক ছবি প্রোফাইলে দিয়ে নিজেকে এসপি প্রমাণ করে অপু। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজেদের ছবি এডিট করে লাগিয়ে দিয়ে অপু ও টিপু প্রতারণা করেছে- এমন প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ।

 

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত অপুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং টিপুসহ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ