ঢাকা ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের টেংরাগিরি ইকো পার্কের ভেতরে যাতায়াতের জন্য ছোট কালভার্ট ও সেতুগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় পর্যটকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। চলাচলের জন্য অনেক পর্যটক নিজেরাই এসব মেরামত করে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।
পর্যটকরা বলেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত পর্যটকরা টেংরাগিরি বন ও সোনাকাটা সমুদ্র সৈকতের একটু স্বাদ নিতে আসেন। সম্প্রতি সময়ে রাস্তাঘাট ও বনের ভিতর ছোটখাটো ব্রিজ ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পর্যটকরা ঝুঁকি নিয়ে এসব ছোট ছোট খাল পারাপার হয়ে সমুদ্রসৈকতে পৌঁছাতে হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল এই ট্যাংরাগিরি বনটি এখন অবহেলায়, অরক্ষিত পড়ে আছে।
তালতলী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে এই বনটি পর্যটকদের মূল আকর্ষণ রয়েছে বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রজাতির অসংখ্য সারি সারি গাছ ও ইকো পার্কের পাশেই সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত। সুন্দরবনের এক অংশ নিয়ে বিশাল বনভূমির উপর টেংরাগিরি ইকো পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬০ সালের ১২ ই জুলাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেয় বন বিভাগ পরে ১৯৬৭ সালের এই বনাঞ্চলটিক টেংরাগিরি বন নামকরণ করে ঘোষণা দেয়। এর আগে স্থানীয়দের কাছে হরিণঘাটার বন, পাথরঘাটার বন ও ফাতরার বনসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।
পর্যটক রাকিব হাসান বলেন, টেংরাগিরি ইকো পার্কে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য সাথে বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ ও সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত। মোটকথা অসাধারণ একটি পর্যটন স্পট। কিন্তু এই পর্যটন স্পটটি পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ও রাস্তাঘাট নেই। পার্কের ভিতর পর্যটকদের জন্য বিশ্রাম ভবনগুলোও জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ। সরকারের এসব রাস্তাঘাট ও কালভার্ট গুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া জরুলি।
তালতলী বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির ওপর তালতলী উপকূলীয় টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সকিনা বিটের আওতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে ইকোট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। ওই সময় ইকোট্যুরিজমে ৫টি কুমির, ৯টি হরিণ, ২৮টি শূকর ও ১টি মেছোবাঘ ছিল। খাবার সরবরাহে সংকটের কারণে ২০১৮ সালে সংরক্ষিত এলাকা থেকে শূকর, কচ্ছপ ও মেছোবাঘ বনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরপর হরিণের বেষ্টনী থেকে ৪টি হরিণও ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে ইকোপার্কের সংরক্ষিত বেষ্টনীতে ২টি কুমির ও ৩ টি হরিণ রয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক ইউসুফ আলী বলেন, তালতলী টেংরাগিরি ফরেস্ট বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ দিলে যেমন বনটি সংরক্ষিত থাকবে তেমনি নারী ধর্ষণ, পর্যটকদের নিরাপত্তাহীনতা, বন উজাড়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না। ফরেস্ট বিভাগের পাশাপাশি পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশনের বিশেষ তদারকির জন্য বিশেষ টিম রাখার সুপারিশ করেন তিনি।
সোনাকাটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুলতান ফরাজী জানান, ইকোপার্কে নিরাপত্তা জোরদার করতে জনবল ও রাস্তাঘাট সংস্কার সহ টেংরাগিরি বন থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত যেতে যে ছোট ছোট খাল গুলো আছে তার উপরে কালভার্ট নির্মাণ করলে দর্শনার্থীদের সুবিধা হত ও পাশাপাশি সরকারের অনেক রাজস্ব আয় বাড়াতো।
তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আপাতত কোনো বরাদ্দ নাই, আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হোসেন বলেন, পর্যটকরা ভাঙা্ সেতু মেরামত করে চলাচল করছেন বিষয়টা আসলেই দুঃখজনক। টেংরাগিরি বন টি খুবই গুরুত্বপূর্ৰ এই বনের ভিতরে ছোট ছোট ব্রিজ গুলো ভেঙে পড়ায় পর্যটকরা খুবই বিড়ম্বনায় পড়েন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রশাসনিকভাবে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক