ঢাকা ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২৩
লিওনেল মেসি আর তাঁর ভক্তদের জন্য আজকের দিনটি বিশেষ। বাঁ পায়ের জাদুতে দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন যে ফুটবল যাদুকর আজ তাঁর জন্মদিন। তবে অতীতের মত সাধারণ নয় আলবিসেলেস্তে অধিনায়কের এবারের এই বিশেষ দিন। এতদিন যে শুধু একজন মহাতারকার জন্মদিন পালন করা হত, আজ তিনি বিশ্বজয়ী। আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে ৩৬ এ পা রাখলেন তিনি।
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিওর এক গ্রামে জন্ম নেন মেসি। ফ্যাক্টরি কর্মী বাবা আর ক্লিনার হিসেবে কাজ করা মায়ের ঘর আলোকিত করে তৃতীয় সন্তান হিসেবে আসেন তিনি। শৈশব থেকেই লাজুক স্বভাবের মেসির বাল্যকাল ছিল না আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতো। মাত্র ১১ বছর বয়সেই গ্রোথ হরমোন জনিত সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। এ জন্য শরীরের স্বভাবিক বৃদ্ধ ব্যাহত হয় তাঁর।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্য ছিলনা চিকিৎসায় এ রোগ সারানোর। যে কারণে শৈশবেই ফুটবলে ঝলক দেখানো মেসির প্রতি আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেট আগ্রহ দেখালেও হয়ে ওঠেনি যোগদান। তবে এরপরই স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার নজরে আসেন তিনি। কথিত আছে নিজের প্রিয় ক্লাবের সাথে ফুটবল ইশ্বরের প্রথম চুক্তিটি নাকি হয়েছিল এক ন্যাপকিন পেপারে।
কাতালান ক্লাবটি রাজি হয় মেসির চিকিৎসার সকল ব্যবয়ভার বহন করার। এরপর তাঁর পরিবারও পাড়ি জমান স্পেনের বার্সেলোনায়। রোগ সারানোর পাশাপাশি মেসিকে ভর্তি করা হয় বার্সার একাডেমি লা মাসিয়ায়। এরপরের ইতিহাস শুধুই সাফল্য, অর্জন আর বিশ্বজয়ের। যে উপাখ্যানে জড়িয়ে আছে হৃদয়ভাঙার গল্পের সাথে স্বপ্নপূরপণের সফলতা।
মেসি পেশাদার ফুটবল শুরু করেন ২০০৪ সালে, বার্সেলোনার হয়ে। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সাফল্য এসে লুটিয়েছে তাঁর পায়ে, করেছে নতি স্বীকার। লা লিগা থেকে শুরু করে কোপা দেল রে। ক্লাব বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ-কোনোটিই বাদ যায়নি আর। খুব কাছে এসেও হাতছাড়া হওয়া বিশ্বকাপ শিরপাও শেষে এসে ধরা দিয়েছে ফুটবল ঈশ্বরের হাতে।
নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মেসি খেলেছেন রোনালদিনহো, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি, কার্লোস পুয়োলদের মত সব তারকার সাথে। জোহান ক্রুইফের পর আর্জেন্টাইন জাদুকরের হাত ধরেই সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে বার্সেলোনা। মেসির সাথে একে একে ১০ টি লা লিগা, ৮ টি স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৭ টি কোপা দেল রে, ৪ টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩ টি ক্লাব বিশ্বকাপ ও ৩ টি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জিতে বার্সা। এমনকি ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটিও নিজের করে নিয়েছেন তিনি, করেছেন ৬৭২ টি গোল।
এক ক্যালেন্ডারে বছরের সেরা খেলোয়াড়কে দেয়া হয় যে ট্রফি সেই ব্যালন ডি’অর মেসি জিতেছেন রেকর্ড ৭ বার। মেসির এ রেকর্ড অদূর ভবিষ্যতে কবে ভাঙবে কিংবা আদৌ ভাঙবে কিনা সেটা নিয়ে আছে বিতর্ক। কারণ মেসির অনন্য এই রেকর্ডের সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বর্ষসেরার ট্রফির সংখ্যা আরও দুটি কম।
এমনকি কোন একটি দেশের সব খেলোয়াড়ের মোট ব্যালন ডি’অর ট্রফিও টপকাতে পারেনি মেসিকে। মেসি-রোনালদোর মতো এক টানা এত মৌসুম দারুণ ফুটবল খেলা সামনের দিনগুলোতে ফুটবলারদের ফিটনেস বিবেচনায় সম্ভব হবে কিনা সেটা সময় বলে দিবে। আপাতত মেসি যে এই রেকর্ড নিজের কাছে রাখবেন বহু বছর সেটা বলে দেওয়া যায়।
মেসিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ব্যালন ডি’অর, ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার, পিচিচি ট্রফি এবং গোল্ডেন বুট পুরস্কার সহ এক মৌসুমে চারটি মেজর পুরস্কার জিতেছেন। এটি এক মৌসুমে কোন ফুটবলারের সবচেয়ে বেশি মেজর পুরস্কার জয় করার রেকর্ড। মেসি ক্যারিয়ারের সোনালি সময় ২০০৯-১০ মৌসুমে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন। যেখানে তিনি বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জয়ের স্বাদ পান।
তবে এত সাফল্যের পরও আক্ষেপ যে ছিলই। দিয়েগো ম্যারাডনার দেশে তাঁর উত্তরসূরী হয়ে যার জন্ম তারই কিনা নেই কোনও আন্তর্জাতিক শিরোপা! নিজ দেশের হয়ে এমন অর্জন না থাকায় সইতে হয়েছে অনেক সমালোচনা। তবে সে সাফল্যও এসে ধরা দিয়েছে তাঁর জীবনে যার শুরু কোপা আমেরিকা দিয়ে। ব্রাজিলকে হারিয়ে ২০২১ সালে প্রথম কোপা আমেরিকা জয়ী হন মেসি।
এর ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ এ এসে কাতার বিশ্বকাপে নিজের জীবনের সবথেকে বড় অর্জনের মুখোমুখি হন ফুটবল যাদুকর। সৌদি আরবের কাছে হেরে শুরু হয়েছিল যে যাত্রা তা শেষ হয়েছে সোনালি ট্রফি উঁচিয়ে ধরার মাধ্যমে। ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে আর্জেন্টিনার সোনালি স্বপন পূরণ করেন তিনি। সেই সাথে পরিণত হন বিতর্কহীন ভাবে এ প্রজন্মের সবথেকে সেরা খেলোয়াড়ে।
বিশ্বজয়ের পর মেসি নিজেও বলেছেন, ফুটবলে সব কিছু জেতা হয়ে গেছে তাঁর। আর কিছু বাকি নেই। ক্যারিয়ারের বাকি সময়টুকু এখন শুধু উপভোগ করেই কাটাতে চান তিনি। ক্যারিয়ারে সব অর্জন পূরণ করে, দেশ, মহাদেশের সীমানা পেরিয়ে সহস্র ভক্তের ভালোবাসা আর আবেগে পরিণত হওয়া ফুটবল ঈশ্বর মেসি এবার হৃদয়ের সব তৃষ্ণা মিটিয়ে পালন করবেন নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ জন্মদিন।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক