ঢাকা ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২২
অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগকে দ্রুত সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেননি সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। উল্টো তারা এ নির্দেশনা নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি করছেন।
ছাত্রলীগের সম্মেলনপ্রত্যাশীরা এমনটাই অভিযোগ করছেন। তাদের দাবি, সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে টালবাহানা করছেন। সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাদের অনাগ্রহ রয়েছে।
সম্মেলনপ্রত্যাশীরা তারিখ ঘোষণার দাবি নিয়ে ১৪ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের কাছে যান। এ নিয়ে দুই পক্ষে উচ্চবাচ্চের একপর্যায়ে দুই নেতা তাদের জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের তারিখ জানাবেন। তারিখ পাওয়ার পর তারা সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু করবেন।
সম্মেলনপ্রত্যাশীদের ভাষ্য, ওবায়দুল কাদের তার নির্দেশনায় এমন কিছু বলেননি।
সম্মেলনের নির্দেশ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা।
তারা জানান, সম্মেলনের তারিখ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের দপ্তরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে তাদের। সম্মেলনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে দপ্তরে আবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই আবেদন সাপেক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি তার দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে সমন্বয় করে এ তিনটি সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করবেন। কেননা প্রতিটি সংগঠনের সম্মেলনেই তার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার দাবি রয়েছে নেতা-কর্মীদের।
মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমরা কোন সময়ের মধ্যে সম্মেলন করতে পারব, সে বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের দপ্তরে তারিখ চেয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। সে আলোকে ১২ মে আমরা নিজেরা বৈঠক করে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সম্মেলন চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সংক্রান্ত আবেদন আমরা দপ্তরে জমা দেব।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারও এ প্রতিবেদককে একই ধরনের তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আগস্টের পর যেকোনো দিন সম্মেলন চেয়ে একটি আবেদন আওয়ামী লীগের দপ্তরে জমা দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
ছাত্রলীগের সম্মেলন আয়োজন নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে গত কয়েক দিন জয় ও লেখকের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আসলে কালক্ষেপণ করছেন। তারা সম্মেলন চান না; তাদের পদ আঁকড়ে থাকতে চান।
‘কমিটির মেয়াদ পার হয়েছে প্রায় দুই বছর। অনেকের বয়স শেষ হয়ে গেছে। আরও অনেকের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। তারপরও সম্মেলন দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় যখন শীর্ষ পর্যায় থেকে সম্মেলনের নির্দেশ এসেছে, তখন তারা নানা অজুহাত, টালবাহানা ও কলাকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন, যাতে সম্মেলন করতে না হয়।’
আরেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনার আলোকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আল নাহিয়ান ও লেখককে আওয়ামী লীগের দপ্তরে যোগাযোগ করে সুবিধাজনক সময় জানাতে বলা হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে তারা কিছু জানাননি।
‘ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য আমাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি। ওবায়দুল কাদের সাহেব সম্মেলন নিয়ে মনগড়া কথা বলেছেন।
ছাত্রলীগের সবশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের জুলাইয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পদ হারান এই দুই নেতা।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জয় ও লেখককে ‘ভারমুক্ত’ করা হয়। এরপর থেকে প্রায় তিন বছর ধরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
দায়িত্ব দেয়ার সময় বলা হয়েছিল, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত এ দুই নেতা রেজওয়ানুল ও রাব্বানীর অবশিষ্ট মেয়াদে (১০ মাস) দায়িত্ব পালন করবেন, কিন্তু সেই কমিটি প্রায় তিন বছর গড়িয়েছে। এর মাঝে একাধিকবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা সম্মেলনের দাবিতে সরব হয়েছেন, কিন্তু বারবার কালক্ষেপণ করতে থাকেন জয় ও লেখক। অবশেষে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকেই সম্মেলনের নির্দেশ আসে।
আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নির্দেশনার পরও ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টালবাহানা করছেন বলে নিউজবাংলার কাছে অভিযোগ করেন ছাত্র সংগঠনটির উপপ্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মেশকাত হোসেনও।
সূত্র : নিউজবাংলা।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক