ঢাকা ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২৩
‘আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়ে দুটো অবশ্য যমজ, অনার্সে পড়াশোনা করছে। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ডাক্তার বানাব। সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল। কিন্তু আমার ছেলে ও ছেলের বউ যে জঙ্গি হবে সেটা কখনো ভাবিনি।’
চিকিৎসক ছেলে সোহেল তানজিমকে নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা বলছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামের হেলাল উদ্দিন।
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তানজিম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এক বছর ধরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি করছিল। বেশ ভালোই যাচ্ছিল সবকিছু। হঠাৎ করে এবারের রোজার ঈদের সাত দিন পর আমাদের কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে সে। এতে আমরা অনেকটা ভেঙে পড়েছিলাম। ছেলে এত বড় ভুল করল কীভাবে। তবুও বাবা হিসেবে মেনে নিয়েছি। কদিন ধরে পত্রিকায় দেখছি ছেলে বউসহ জঙ্গি হয়েছে। এটা মানব কীভাবে?’
ছেলে তানজিম ও তার স্ত্রী মাইশা ইসলাম ওরফে হাফসা গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হেলাল উদ্দিন। পরে তারা জানতে পারেন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন মাইশা। সোহেল তানজিমও সেখানে ছিলেন। তবে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার নির্জন পাহাড়ি এলাকার একটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে অভিযান চালিয়ে তিন শিশুসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
সিটিটিসি বলছে, তারা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য। অভিযানে তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা ও জঙ্গি প্রশিক্ষণসামগ্রী উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হেলাল উদ্দিন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তানজিম সবার বড়।
স্থানীয়রা জানান, উগ্রবাদে জড়িত থাকার সন্দেহে ২০২২ সালে র্যাব তানজিমকে গ্রেপ্তার করেছিল। তখন বাবা হেলাল উদ্দিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। তবে জামিনে বেরিয়ে ছেলে চাকরি শুরু করেন। তখন আশায় ছিলেন ছেলে সব ছেড়ে দেবে। ছেলের গতিবিধির ওপর বিশেষ নজর রাখতেও শুরু করেছিলেন হেলাল উদ্দিন। খারাপ পথে গেলে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। তবে এতে কোনো লাভ হয়নি। উল্টো পরিবারের অমতে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক করে ২০ বছর বয়সী মাইশা ইসলামকে বিয়ে করেন তানজিম। মাইশা নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর বাজার এলাকার সাইদুল ইসলাম ওরফে দুলালের মেয়ে।
তানজিম ছোটবেলা থেকে অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল উল্লেখ করে বাবা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেলে যেদিন ভর্তি হইল (তানজিম) সেদিন ভাবলাম আল্লাহ মুখ তুইলা চাইছে। সবাই কয় ডাক্তারের বাপ হইছি। আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য সবাই বন্ধুর মতো। এরপরও এমনটি কেমনে হলো?’
তিনি আরও বলেন, ছেলে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করত। হঠাৎ গত জুলাই মাসের শেষে হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় তানজিম চার দিন ধরে হাসপাতালে আসেন না। তার বন্ধু ও সহকর্মীরা ফোন দিয়ে পাচ্ছেন না। তার স্ত্রীর মোবাইলও বন্ধ। দু-তিন দিন এখানে-ওখানে খুঁজে না পেয়ে জিডি করি।
খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহা-ব্যবস্থাপক কৌশিক আহমেদ জানান, গত ২৫ জুলাই কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখে তারা তানজিম ও তার স্ত্রীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তার বাবার মোবাইলে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ জুলাই এনায়েতপুর থানায় জিডি করেন।
হেলাল উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, অনেক আশা ছিল ছেলে অনেক বড় চিকিৎসক হবে। তাকে ঘটা করে বিয়ে দেব। হেলিকপ্টারে করে ছেলে-বউকে বাড়িতে নিয়ে আসব। আমার সেই আসা পূরণ হয়নি। আমার ছেলে আমার মানসম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক