ঢাকা ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
যুগে যুগে ভালোবাসা তৈরি করেছে ইতিহাস। কেউ হয়েছে দেউলিয়া কেউ আবার হারিয়েছে জীবন। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীর প্রেমে এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রেমিকের প্রেম উপাখ্যান এক অনন্য ভালোবাসার উদাহরণ।
ময়মনসিংহে সোহেল মিয়া ও রওশন আক্তারের ভালোবেসে বিয়ে হয়। এরপর স্ত্রীকে পিঠে নিয়ে চলছে ১৪ বছরের সংসার।
১০ টাকায় পাওয়া নম্বর থেকে যে ভালোবাসার শুরু, তা আজ ১৪ বছর পেরিয়েছে। প্রতিদিনের কথোপকথনে ঘটে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক। মেয়েটি প্রাথমিক পর্যায়েই তার প্রেমিককে জানিয়েছিলেন তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু ভালোবাসার মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করা গোদাগাড়ীর সোহেল মিয়া ২০০৭ সালে পরিবারের অমতে বিয়ে করেন রওশন আরাকে। সেই থেকে পিঠে চড়িয়ে সংসারের কাজ, বিভিন্ন যায়গায় যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো আর স্ত্রীর সব দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এ যেন ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন সোহেল-রওশন দম্পতির মধ্যে।
সোহেল মিয়া আট ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নেন সোহেল। ১০ টাকার নোটে পাওয়া ফোন নাম্বারে কল করে পরিচয় হয় ত্রিশালের আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামের রওশন আরার সঙ্গে। প্রতিদিনই কথা হতো দুজনের মধ্যে।
এক সময় সোহেল রওশনকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। জন্মসূত্রেই দুই পা বিকলাঙ্গ রওশন তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা সোহেলকে জানিয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু ততক্ষণে ভালোবাসার মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে, তার প্রেমে প্রায় অন্ধ ছিল সোহেল।
২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে প্রেমের সম্পর্ক শুরু। শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে প্রেমিক যুগল ওই বছরের ডিসেম্বরে বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। ভালোবাসার টানেই সোহেল তার পরিবারের অমতে প্রতিবন্ধী রওশনকে বিয়ে করেন।
পরিবারের সদস্যদের আপত্তির কারণে স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে উঠতে পারেননি সোহেল। অকৃত্রিম ভালোবাসার রওশনকে সবসময় পাশে পেতে আর দেখাশোনার জন্য ঢাকা থেকে ইউনিফুডের চাকরি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বেছে নেন ব্যবসা। যদিও ১০টা মেয়ের মতো সুস্থ স্বাভাবিক নয় রওশন, তবুও কখনো ছেড়ে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতির পর সোহেল স্ত্রীকে নিয়ে পার করেছেন জীবনের ১৪টি বছর।
বাস্তবতায়- ভালোবাসা যেখানে অভাব অনটন দেখে, সেখান থেকে দৌড়ে পালায়, সেখানে অভাবকে বরণ করে ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন গড়ে তুলেছেন ওই দম্পতি।
এদিকে, সোহেল-রওশনের ভালোবাসার গল্প সারাদেশে ছড়িয়েছে পড়ছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের প্রশংসাও কুড়াচ্ছেন তারা। কেউ কেউ বলছেন, ভালোবাসা এমনই হওয়া উচিত।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক