মায়ের_আর্তনাদ

প্রকাশিত: ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২৩

মায়ের_আর্তনাদ
নিউজটি শেয়ার করুন

 

 

-এই তোমার মাকে আমাদের বিছানা থেকে উঠতে বলো নাগো।দেখছোই তো।কাপড় চোপড় তো যেখানে সেখানেই নষ্ট করে ফেলে।বিছানাটাও যদি নষ্ট করে ফেলে।

 

 

কথাটা শুনে বয়ষ্ক জাবেদা বেও চোখের কোণে পানিটা মুছে মুচকি হাসলেন।ছেলের খাট তার স্বামীর দেওয়া শেষ স্মৃতি।তাই একটু ছুয়ে দেখছিলেন।তবে ছেলের বউয়ের কথা শুনে মুচকি হেসে ধীর গতিতে রুম ত্যাগ করলেন জাবেদা বেও।

 

 

-বয়স তো আর কম হলো না।বৃদ্ধাশ্রমে গেলোও তো পারেন।শুধু জানেন ছেলের ঘরে বসে খেতে।আপনি তো বোঝেনই‌ আপনার জন্য আমাদের সমস্যা হয়।তিনবেলা খাবেন দাবেন ।আর!কী করেন সংসারের‌‌তো কাজে লাগেন না।

 

 

-নীলা ঠিকই বলেছে ।তুমি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাও‌ মা।আমাদের সমস্যা হচ্ছে ।সংসারে তোমার জন্য আমাদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে চলে যাও‌।‌

 

 

ভাতের লোকমাটা আর মুখে ঢুকালেন না।জাবেদা বেও।পাসে রাখা ভোতা‌‌ স্টিলের গ্লাসটা থেকে পানি খেয়ে,লাঠি ধরে ধীর গতিতে উঠলেন।এই যুগে তো বাবা মাকে কে রাখে কাছে।তুমি বৃদ্ধাশ্রমে বরং চলে যাও।

 

 

পাশেই ঘুনে ধরা‌ পালংকটা থেকে দুটো আধছেড়া ‌সাদা শাড়িটা হাতে নিয়ে বললেন -তুই‌‌ খুশি থাকলেই আমি খুশি বাবা।আমি বুড়ো মানুষ।কখন ওপারে চলে যাই।কটা দিনইবা থাকবো।শুধু শুধু বোঝা তোদের।

 

 

 

ধীর গতিতে ছোট ছোট পা ফেলে চৌকাঠ‌ পার হলেন জাবেদা বেও। বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন।তিনি কত বছরই পার করেছেন এই‌ বাড়িটায়।সময়টা হারিয়ে গেছে।যুগ,সময়,আধুনিকতা‌ এগুলো তো বাহানা।মানুষের মানসিকতা আজ লোপ পেয়েছে বলতে গেলে।তবে তিনি হাসি‌মুখে তার গন্তব্যের দিকে পা বারালেন।

 

 

কত জনের কত‌ দুঃখের কথা শোনেন।বৃদ্ধশ্রমে এসে জীবন কতটা কঠিন তার বাস্তব রুপ দেখে প্রতিদিন জাবেদা।কত বাবা মার শব্দহীন আর্তনাদ শোনেন।

 

 

 

আজ ছেলেটার কথা মনে পড়ছে‌ তার।ভালো আছেতো ছেলেটা।জ্বর বাধিয়েছে জাবেদা।প্রতিটি সময়ই সে তার ছেলের কথা ভাবেন।আজ বড্ড ছেলেটাকে মনে পড়ছে।মনে মনে বললেন বাপ‌জান‌ , তোর যহন খিদা পাইতো ‌কিন্তু,‌খাইবার চাইতি না তখন ভাতের থালাডা নিয়া তোর পিছন দৌড়াইয়া বেড়াইতাম সারা বাড়ি।কিন্তু,তোর অহোন দু মুডা পানি দিয়ে ভাত খাওয়ায়তে‌‌ কষ্ট হয় বাজান।তুই‌ যহন বাইরে থেইকা খেইলা আইশা জ্বর বাধাইতি।তহন আমার জানটা‌ বাহির হইয়া যাইত।সারা রাত জলপট্টি দিতাম আর চোখের পানি ফেলাইতাম।বাপজান দেখ জ্বরে না আমার সারা গা ব্যাথা,শরীর পোড়ে‌‌।তোর একটু দেখবার মনে চায়‌ বাপজান।আয় না চোখ‌ কেমন নিভু নিভু করে বাপজান।একটু মা বলে ডাক না বাপজান।কই গেলি বাপজান।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ