‘মাদকের আসর বসাতে’ পুলিশকে বাধা, জেল খাটছেন ৪ ব্যক্তির!

প্রকাশিত: ৪:১২ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২২

‘মাদকের আসর বসাতে’ পুলিশকে বাধা, জেল খাটছেন ৪ ব্যক্তির!
নিউজটি শেয়ার করুন

 

পটুয়াখালীতে মেজবাহ উদ্দিন নামে এক পুলিশ সদস্য ও তার সঙ্গীদের ‘মাদকের আসর বসাতে’ বাধা দেওয়ার জেরে চার ব্যক্তি জেল খাটছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্য তার স্ত্রী মরিয়ম আক্তার জেরিনকে বাদী করে দ্রুতবিচার আইনে একটি মামলাও করেছেন।

 

ওই মামলায় ঘটনার সাক্ষী ও মাদক সেবনে বাধাদানকারী মীর নোমান (৩৫), মো. স্মরণ আহম্মেদ (২২) ও তার ভাই মো. সাব্বির হোসেন (২৪) ও তাদের বৃদ্ধ মামা গোলাম সরোয়ারকে আসামি করে তাৎক্ষণিক জেলে পাঠানো হয়েছে।

 

এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে তুলে নেওয়ার পর মীর নোমানকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। ১৩ জুন পৌর এলাকার লতিফ স্কুল সড়কে এমন ঘটনা ঘটে বলে গত সোমবার রাতে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে এসে ভিকটিমের পরিবার এমন অভিযোগ করেছেন। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছেন।

 

ভুক্তভোগী গোলাম সরোয়ারের ছোট বোন আলপনা বেগম যুগান্তরকে বলেন, স্মরণ আহম্মেদের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ মে মারা যান। তার গোসল ও দাফনের কাজ বাসার নিচের পরিত্যক্ত একটি কক্ষে সম্পন্ন হয়। ওই কক্ষে আমার মেঝ ভাই গোলাম হায়দার টিটু, পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, শহরের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর লাবু ও উজ্জল শীল নিয়মিত মাদক সেবন করেন।
তিনি বলেন, গত ১২ জুন বিকাল সাড়ে ৫টায় টিটুর নেতৃত্বে ওই পুলিশ সদস্যসহ বাকিরা ওই কক্ষে মাদকের আসর বসান। এ সময় মৃতের দুই ছেলে স্বরন ও সাব্বির আপত্তি জানিয়ে বলেন- সম্প্রতি তাদের মা মারা গেছেন এবং মায়ের দাফন কাফনের যাবতীয় কাজ এ কক্ষে হয়েছে। তাই এখানে কক্ষে মাদক সেবন করা যাবে না।

 

আলপনা বেগম আরও জানান, দুই ভাইয়ের আপত্তি নিয়ে অপর চারজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় তাদের ভাড়াটিয়া মীর নোমান এগিয়ে প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্য মেজবাহ ও তার সঙ্গী টিটুর সঙ্গে ও স্বরন ও সাব্বিরের হাতাহাতি হয়। কিছুক্ষণ পর আসর নামাজ আদায় করে বাসায় ফেরেন স্বরনের মামা গোলাম সরোয়ার। তিনি ঘটনা শুনে ছোট ভাই টিটুকে শাসন করেন এবং বাকিদের গালমন্দ করেন।

 

এ সময় পুলিশ সদস্য মেজবাহ ডিবি পুলিশকে খবর দেন। তারা এসে মীর নোমান, স্বরন আহম্মেদ ও তার ভাই সাব্বির হোসেন এবং তাদের মামা গোলাম সরোয়ারকে তুলে নিয়ে যায়। পরে মামলা দিয়ে তাদের জেলে পাঠায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান টিটু, উজ্জল ও লাবু।

 

সাব্বিরের স্ত্রী নুসরাত জাহান বলেন, তার মামাশ্বশুর গোলাম হায়দার টিটুর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনসহ অন্যরা এখানে মাদকের আসর বসাতেন। তার স্বামী ও দেবর (স্মরন) মাদক সেবনের বিষয়টি দেখে প্রতিবাদ জানান। এতে পুলিশ সদস্য মেজবাহ তার স্বামী ও দেবরকে মারধর করে। তাদের বড় মামা গোলাম সরোয়ার ঘটনাস্থলে ছিলেন না। অথচ তাকেও বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।

 

মীর নোমানের স্ত্রী আফরোজা বেগম জানান, ঘটনার দিন তিনি বাবার বাড়িতে ছিলেন। বাসায় ফিরে সব জানতে পারেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ১১ জুন ডিবির নেতৃত্বে শহরের একটি মাদকের অভিযান হয়। ওই অভিযানে আমিও ছিলাম। ১২ জুন আমি শহরের লতিব স্কুল রোডে বাসা ভাড়ার জন্য যাই। এ সময় আসামিরা আগের দিনের ঘটনার জেরে আমার ওপর হামলা করে। আমি প্রাণে বাচতে ডিবি পুলিশকে খবর দিই। তিনি মাদক সেবনের সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেন।

 

বিভাগীয় মামলা প্রসঙ্গে মেজবাহ উদ্দিন জানান, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মরিয়ম আক্তার জেরিনকে বিয়ে করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা তদন্তাধীন আছে।

 

এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশের ওসি এএকএম আজমল হুদা বলেন, মেজবাহ উদ্দিন এসএএফ পুলিশ সদস্য এবং পুলিশ লাইনে আছেন। তিনি ডিবির সঙ্গে মাদকের অভিযানে থাকার প্রশ্নই উঠে না। আর ওইদিনের অভিযানটি ছিল সদর থানা পুলিশের, ডিবি তাদের সহায়তা করেছে।

 

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। নোমানকে মারধর করা হয়নি। তদন্তে যে দোষী প্রমাণিত হয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমাদ মাঈনুল হাসান বলেন, তদন্তে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। পুলিশ সদস্য মেজবাহ মাদকের সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ কেউ করেননি। জড়িত থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

 


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ