ভারতে ৮ বছর ধরে থানায় বসবাস করছেন এক বাংলাদেশি

প্রকাশিত: ২:৩৪ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২৩

নিউজটি শেয়ার করুন

 

ভারতে টানা আট বছর ধরে আটকে রয়েছেন এক বাংলাদেশি নাগরিক। আর এই সময়টা তিনি পুরোপুরি বাস করে আসছেন থানা বা পুলিশ স্টেশনের ভেতরে। আর এতে করে ওই পুলিশ স্টেশনটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশি ওই নাগরিকের দ্বিতীয় বাড়ি।

 

 

তাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টায় সফল হয়নি পুলিশ। আর এতে করে ভারতের অনেক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। শুক্রবার (২৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

 

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা আট বছর ধরে থানায় বসবাস করা ওই বাংলাদেশি নাগরিকের নাম সম্রাট মন্টো বিশ্বাস। তিনি অবৈধপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন এবং এরপর ২০১৩ সালে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের কৃষ্ণা জেলা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।

 

 

আর আট বছর আগে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং এরপর থেকে কৃষ্ণা জেলার একটি থানায় অবস্থান করছেন সম্রাট মন্টো বিশ্বাস। তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ঝুলে রয়েছে এবং এতে করে পুলিশের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তার অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছেন তিনি।

 

 

দ্য হিন্দু বলছে, থানার ভেতরে মন্টো বিশ্বাসের অবৈধ অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা ভারত সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। আর এতে করে আট বছর ধরে আটকে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের একটি থানা হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় বাড়ি।

 

 

অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের এলুরু রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জি.ভি.জি. অশোক কুমার বলেছেন, ফরেনার্স অ্যাক্টের অধীনে ২০১৩ সালে ওই অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করেছিল নাগায়ালঙ্কা পুলিশ। মূলত ইয়েদুরুমন্ডির তৎকালীন গ্রাম রাজস্ব কর্মকর্তার (ভিআরও) দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে নাচুগুন্টা গ্রামে সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করার সময় তাকে আটক করা হয়।

 

 

পুলিশ সুপার (এসপি) পি. জোশুয়া দ্য হিন্দুকে বলেছেন, গ্রেপ্তারের পর সম্রাট মন্টো বিশ্বাসকে আভানিগড্ডা আদালত দোষী সাব্যস্ত করে এবং কারাদণ্ডের সাজা দেয়। কারাদণ্ডের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৫ সালের মার্চ মাসে তিনি মুক্তি পান এবং কারা বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে নাগায়ালঙ্কা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

 

 

এসপি বলেন, ‘তাকে তার দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি এবং তিনি এখানেই থেকে যাচ্ছেন।’

 

 

পি. জোশুয়া বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার, ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (বিদেশি বিভাগ), নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র (পাসপোর্ট) বিভাগ, ডিজিপি এবং সকল রাজ্যের পুলিশ কমিশনারদের অবহিত করেছি।’

আভানিগড্ডার ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) পি. মুরলীধর বলেন, তদন্তের সময় মন্টো বিশ্বাস পুলিশকে বলেছিলেন তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তবে তিনি কীভাবে এবং ঠিক কী উদ্দেশ্যে ভারতে এসেছিলেন তা প্রকাশ করেননি।

 

 

সিআই জি. শ্রীনিবাস বলেছেন, ‘সম্রাট মন্টো বিশ্বাস বাংলাদেশের পাবনা জেলার কাসারপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি সমুদ্রপথে দেশে প্রবেশ করতে পারেন বলে আমাদের সন্দেহ। তিনি শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলেন।’

 

 

চেষ্টা চলছে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর
ভারত সরকারের আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব বিদেশি অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করছে তাদের ডিটেনশন সেন্টারে স্থানান্তরিত করা উচিত এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

 

 

 

পি. মুরলীধর বলছেন, ‘আমরা শুধুমাত্র মানবিক কারণে সম্রাট মন্টো বিশ্বাসকে থানায় থাকতে দিচ্ছি, কারণ এখানে আমাদের ডিটেনশন সেন্টার নেই। তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।’

 

 

হয়ে উঠেছেন পরিচিত মুখ
দ্য হিন্দু বলছে, সম্রাট মন্টো বিশ্বাসকে সাধারণত লুঙ্গি এবং শার্ট পরে থাকতে দেখা যায়। ইতোমধ্যেই তিনি নাগায়ালঙ্কা থানায় অফিসার এবং অন্যান্য দর্শনার্থীদের কাছে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। তিনি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করেন।

 

 

থানার এক কর্মী বলেন, ‘মন্টো বিশ্বাস খুব কম কথা বলেন। তিনি পুলিশ স্টেশন পরিষ্কার করেন এবং আমরা তাকে যা খাবার দিই তা নিয়ে যান। তিনি নিয়মিত পূজা করেন, জামাকাপড় পরিষ্কার করেন এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখেন। তিনি নিজের দেশ এবং নিজের পরিবারের কথা বলতে আনন্দ বোধ করেন।’

 

 

এসআই সুব্রামণ্যম বলেন, ‘সংক্রান্তির সময়, আমরা তাকে তিন জোড়া জামাকাপড় কিনে দিয়েছিলাম এবং তিনি বেশ খুশি হয়েছিলেন। তিনি কখনোই পুলিশ স্টেশন থেকে বাইরে বের হন না।’

 

 

 

মন্টো বিশ্বাস দ্য হিন্দুকে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত এবং তিনি চান কর্মকর্তারা তার দেশে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করুক।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ