বেতাগীতে ১৪১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কলাগাছের শহীদ মিনার!

প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

 

বেতাগীঃ ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও এ উপজেলার ১৪১ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কলাগাছের শহীদ মিনার নির্মাণে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

 

১৯৫২ সালে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন এদেশে তরুণ ছাত্রজনতা। সেসব ভাষা সৈনিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনার। আমাদের ভাষা আন্দোলনকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় দিবসটির গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।

 

২১ ফেব্রুয়ারিতে এদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খালি পায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার।

 

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটিতে শহীদ মিনার থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই। উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২৯টি। এর মধ্যে শতকরা ৫৫ টি শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট ৭৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এছাড়া ৭ টি কলেজ, ১৯ টি মাধ্যমিক, ৮ টি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৫৮ টি ইফতেদায়ী, দাখিল, আলিম ও ফাজিল পর্যায়ের মাদরাসার মধ্যে ৬৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

 

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দিবসটি পালনের লক্ষ্যে ওইদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরী করে স্থানীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী ভাবে কলা গাছ, কাঠ, বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করে।

 

ঝোপখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবেদুর রহমান নান্টু বলেন, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করতো। ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দিবস সম্পর্কে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

 

কয়েকটি বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ভাষা দিবসে আমরা কলার গাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। এলাকার অভিভাবকগণ নতুন প্রজন্মকে বঞ্চিত না করে দ্রুত নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান।

 

উপজেলা প্রাথমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ইতোপূর্বে এ উপজেলার অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করে দেওয়া হয়েছে।’

 

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান বলেন,’ ইতোমধ্য উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’এর মধ্যে প্রায় ১৫ টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চলতি বছরে বাকি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানতে পারবে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ