বিলীন হবার পথে বানারীপাড়ার ঐতিহ্য ধানচালের ভাসমান হাট

প্রকাশিত: ২:২৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০২০

নিউজটি শেয়ার করুন

 

বরিশাল : কালের বিবর্তনে বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে দেড়শ শতাধীক বছরের ধানচালের ভাসমান হাট তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সুদুর বৃটিস-ভারত যুগে ধান চালের বেচাকেনা ও প্রক্রিয়াজাত করনের জন্য বনরীপাড়ার এ ভাসমান হাট দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্রের রূপ নিলেও সম্প্রতিককালে তা আর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছে না।

আধুনিকতার ছোয়ার সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ নানা সীমাদ্ধতায় ধান-চালের ব্যবসা বিকেন্দ্রীকরন হয়েছে গত এক দশকে। ফলে বানরীপাড়ার সন্ধা নদীর ভাসমান হাটটি কালের পরিক্রমায় এখন হারিয়ে যাবার পথে।

 

শতাব্দীকালেরও আগে থেকে ‘বরিশালের বালাম চাল’এর যে সুখ্যাতি ছিল, তার বড় মোকাম ছিল এ ভাসমান হাট। এমনকি সেই বালাম চাল প্রক্রিয়াজাত করা হতো বানারীপাড়ায়ই। উচ্চ ফলনশীল ধানের নতুন জাতের আবাদ বাড়ায় ইতিমধ্যে বালাম চাল’এর প্রচলন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আর এরই সাথে এ ভাসমান হাটের সুনাম সুখ্যাতিতেও ভাটা পড়েছে। হাটের পরিধি সংকুচিত হয়েছে। দূর দূরান্তের ব্যবসায়ী, কৃষক ও কুঠিয়ালরা ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন এ ভাসমান হাট থেকে।

 

বালাম ছাড়াও অন্যান্য চালের চাহিদা ও সুনামের জন্য ঢাকা, ফরিদপুর, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, পটুয়াখালী, সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকার শতশত ফরিয়া এখানে এসে সপ্তাহে দুদিন চাল কেনাবেচা করত। এমনকি সিলেট, ভৈরব, আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সন্দ্বীপ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝিনাইদহ ও যশোরের ব্যবসায়ীরা তাদের এলাকায় উৎপন্ন ধান বিক্রি করতেও নৌপথে বানারীপাড়ার ভাসমান হাটে আসতেন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধানচালের ব্যবসার ওপরই বানারীপাড়ার অন্যান্য ব্যবসাও নির্ভরশীল ছিল। নিকট অতীতেও এ হাটে ধান থেকে চাল উৎপাদনকারী কুটিয়ালদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার।

 

নব্বই দশকের শেষ অবধি ৫ সহস্রাধিক পরিবার এ পেশার উপর নির্ভরশীল ছিল। উপজেলায় যে শতাধিক ধান ছাটাই কল বা রাইচ মিল ছিল, তার সংখ্যা এখন হাতেগোনা। স্থানীয় ৭০ ভাগ মানুষ এ ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরক্ষোভাবে জড়িত থাকলেও এখন সে সংখ্যা ১০ ভাগেরও কম।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ