বরিশালে গাছ তলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ডায়রিয়া রোগীরা

প্রকাশিত: ৮:২১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২১

নিউজটি শেয়ার করুন

 

বরিশাল: বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা কমছেই না। বরং ডায়রিয়া রোগীর বাড়তি চাপের কারনে তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

 

বর্তমানে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য জায়গা সংকটের পাশাপাশি স্যালাইনের সংকটও দেখা দিয়েছে এ হাসপাতালে। তাই রোগীদের বাহির থেকে উচ্চমূল্যে স্যালা্ইন কিনে আনতে হচ্ছে।

 

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংকটের কথা সরাসরি না বলে বলছেন, ২-৪ টা পর্যন্ত আইভি স্যালাইন একজন রোগীকে দেয়া যায়, কিন্তু তার বেশি প্রয়োজন হলে তা সম্ভব হয় না।

 

এদিকে রোগীর স্বজনরা বলছেন, কেউ সর্বোচ্চ ১টার বেশি আইভি স্যালাইন পাচ্ছেনা। আর রাতের বেলা ভর্তি হওয়া রোগীরা তো সেটাও পাচ্ছে না।

 

আমিনুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর তার রোগীকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর চিকিৎসা সেবা তাৎক্ষনিক শুরু হলেও আইভি স্যালাইন সরকারিভাবে হাসপাতাল থেকে না পাওয়ায় বাহির থেকে কিনে আনতে হয়েছে।

 

স্যালাইন বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ৯২ টাকা মূল্যের এই স্যালাইনটি হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকান থেকে ১২০ টাকায় কিনে রোগীকে দেয়া হয়েছে।

 

বাহিরে স্যালাইনের দাম বাড়তি রাখা ও হাসপাতাল থেকে ১ টির বেশি স্যালাইন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন আরো অনেক রোগীর স্বজনরা। এদিকে এ হাসপাতালের ডায়েরিয়া ওয়ার্ডঘুরে রোগীদের প্যান্ডেলের বাহিরে গাছ তলাতে কিংবা ভ্যানের ওপর রাখতেও দেখা গেছে। তবে যেখানেই থাকতে হয় না কেন এ হাসপাতালে রোগী আসার পরপরই তার চিকিৎসাসেবা শুরু হয়ে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনরা।

 

তবে এ বিষয়ে বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের আরপি ডাঃ মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, জেনারেল হাসপাতালে মহিলা ও পুরুষ মিলে মাত্র ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড। কিন্তু সেখানেই ২৪ টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সম্প্রতি যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সবকিছুতে হিমশিম ক্ষেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্যান্ডেল করে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে আরো ৯ টি বেড বসিয়েও হচ্ছে না। কিন্তু চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি, কোন রোগী চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে না।

 

তিনি জানান, সোমবার সকাল পর্যন্ত হিসেবে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৯৬ জন রোগী ছিলো। দুপুরে সুস্থ হওয়া রোগীদের ছেড়ে দেয়ার পর এর সংখ্যা ৫০-৬০ এ গিয়ে দাড়ায়। তবে নতুন করে আরো রোগি তো প্রতিনিয়ত ভর্তি হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, একজন রোগী আসার সাথে সাথে তাকে হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। সেটা ১ টা ২ বা যে কয়টা প্রয়োজন হয় তাই দেয়া হয়। স্যালাইনের সংকট না থাকলেও রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা ব্যালেঞ্চ করে চালাতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একজন রোগীর অনেক বেশি স্যালাইনের প্রয়োজন হলে তা হয়তো দেয়া সম্ভব হয় না, কিন্তু ২-৫ টা স্যালাইন রোগী প্রতি গড়ে দেয়া হচ্ছে। যদিও একবারে অসহায় রোগীদের ক্ষেত্রে হিসেবটা সম্পূর্ণই আলাদা বলে জানান তিনি।

 

ব‌রিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ‌্য প‌রিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস বলেন, হঠাৎ করে ডায়া‌রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ‌্যা বৃ‌দ্ধি পাওয়ায় বিষয়‌টি নিয়ে অনুসন্ধান করে যেটুকু জানাগেছে, তাতে ডায়‌রিয়ায় শহরের মানুষ তেমন আক্রান্ত না হলেও বে‌শি আক্রান্ত হ‌চ্ছে উপকূল ও গ্রামাঞ্চ‌লের মানুষ।

 

তিনি বলেন, মার্চ ও এ‌প্রিল মাসের আবহাওয়া প্রচুর প‌রিমান গরম হওয়ায় গ্রা‌ম ও উপকূলের মানুষ পান্তা ভাত খে‌য়ে থা‌কে প্রচুর। আর সেই পান্তা ভাত তৈরীতে পরিশো‌ধিত পা‌নি ব‌্যবহার না করায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া ডায়া‌রিয়া আক্রা‌ন্তের আরও এক‌টি কারণ আমরা লক্ষ‌্য ক‌রে‌ছি। সেটা হ‌লো গরমে রাস্তার পাশে শরবত, বরফ দিয়ে আখের রস তৈরী করা হয়। কিন্তু সেই শরবত বা জুস তৈরীতে যে বরফ ব‌্যবহার করা হয় সেই বরফ নদী বা খালের পা‌নি দি‌য়ে মাছের বাজারজাত করনের জন্য তৈরি করা হয়।

 

বাসু‌দেব কুমার দাস জানান, মানুষ একটু সচেতন হ‌লেই পা‌নিবা‌হিত এই রোগ প্রতি‌রোধ সম্ভব। ব‌রিশাল বিভা‌গে এ বছর এখন পর্যন্ত ডায়া‌রিয়া আক্রা‌ন্তের সংখ‌্যা ২৯ হাজার ১১৪। সব থে‌কে বে‌শি আক্রান্ত দ্বীপ জেলা ভোলায়।

 


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ