প্রতিবন্ধী আসাদুলের সময় কাটে মাটির গর্তে

প্রকাশিত: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০

প্রতিবন্ধী আসাদুলের সময় কাটে মাটির গর্তে
নিউজটি শেয়ার করুন

শারীরিক, বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু আসাদুল। চার বছর বয়সে তার মা রাশেদা বেগম ঢাকার এক বাসায় ছেলেকে রেখে যান। তারপর তিনি আর ছেলের খোঁজ নেননি। পরে আসাদুলের চাচি নুরেছা বেগমের সহযোগিতায় আসাদুলকে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়। বাড়ি ফিরে মাটির গর্তেই সময় কাটায় আসাদুল।

 

আসাদুল শেরপুরের নকলার চন্দ্রকোনা ইউপির রামপুর গ্রামের দিনমজুর মো. রুবেল মিয়ার ছেলে। রুবেল তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে মা শহর বানুর কাছে রেখে যান। সেই থেকে আসাদুল দাদী শহর বানুর কাছে থাকে। নাতি ও নিজের জীবনযাপনের জন্য তাকে নির্ভর করতে হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির ওপর। বাঁশের ছোট ভাঙা ঘরে প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে থাকেন শহর বানু।

 

মা বাবার কাছে আশ্রয় মেলেনি প্রতিবন্ধী এই শিশুটির। আসাদুলের বাবা ঢাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। স্ত্রী রাশেদার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। দরিদ্র বিধবা দাদীই এখন তার একমাত্র আশ্রয়। তবে যে উপায়ে দাদী তাকে বাঁচিয়ে রাখছেন, সে উপায়টি মোটেও সম্মানজনক নয়। দাদী ভিক্ষা করে দুইজনের খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিন বছর ধরে এভাবেই দিন চলছে দাদী-নাতির।

 

শহর বানু নিজেও অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে কোমরের ব্যথায় ভুগছেন। তারপরও প্রতিবন্ধী নাতিকে কোলে নিয়ে সারা দিন ভিক্ষা করেন। দুপুরে যদি কারও বাড়িতে খাবার পান তাহলে খেয়ে নেন, সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে রান্না করে নিজে খান এবং নাতিকে খাওয়ান। রান্না ও গোসলসহ অন্যান্য কাজের সময় প্রতিবন্ধী শিশুটিকে ছোট একটি গর্তে রেখে যান দাদি শহর বানু। কারণ শিশুটি একা বসে থাকতে পারে না। বিছানায় শোয়ানোর সময়ও তাকে ধরে রাখতে হয়। তা না হলে বিছানা থেকে সে পড়ে যায়। ঘরের ভেতর গর্তে প্রতিবন্ধী নাতিকে রেখে দাদি শহর বানু রান্নাসহ যাবতীয় কাজ করেন।

 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তাদের নাম তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হবে। আবেদন পেলে ওই বিধবা নারী ও প্রতিবন্ধী শিশুটির জন্য বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা’র কার্ড দেয়ার জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রশাসনের নজরে আসে।

 

পরে ১ সেপ্টেম্বর আসাদুলকে সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালিত অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং শিশুটির দাদী শহরবানুকে স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের মাঝে ভাতার বহি বিতরণ করা হয়েছে। এই ভাতা বহির কার্ড বিতরণ করেন ইউএনও জাহিদুর রহমান। এ সময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন, উপজেলা প্রকৌশলী আরেফিন পারভেজ, চন্দ্রকোনা ইউপি চেয়ারম্যান সাজু সাঈদ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

 

ইউএনও জাহিদুর রহমান বলেন, শহরবানুকে বিধবা ভাতা ও নাতিকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দেয়া হয়েছে। ডিসির পক্ষ থেকে আসাদুলকে তার চলাচলের সুবিধার্থে একটি হুইল চেয়ার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জমি আছে ঘর নাই প্রকল্প থেকে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। শহরবানুকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আপাতত কারো কাছে যেনো হাত পাততে না হয় সেজন্য গতকাল দুই সপ্তাহের বাজার তার বাড়িতে দিয়ে আসা হয়েছে।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ