ঢাকা ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২০
ইতিহাস, রাজনীতি বিজ্ঞান আর আইনে মাস্টার্স শেষ করে কলেজ একজন শিক্ষক ও সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ভারতের প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেকে রাজনীতির শীর্ষে তুলে এনেছিলেন। শুরুটা শিক্ষকতা দিয়ে হলেও একপর্যায়ে ভারতের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তিনি।
প্রণব মুখার্জির ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সিনিয়র এডিটর জয়ন্ত রায় চৌধুরী বলেন, প্রায় পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন প্রণব মুখার্জি। তবে তিনি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন। যখন খুব সমস্যার মধ্যে পড়েছেন সেটাকেও পার করেছেন। যেমন কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে নিজে দল করার চেষ্টা করেও আবারো সেই কংগ্রেসেই ফিরলেন তিনি। সেই খারাপ সময় কাটাতে পেরেছেন কারণ পরিচিতি। তার এতোটা গুরুত্ব ছিলো যে কেউ তাকে আলাদা করতে পারেনি। বেশিদিন কেউ তাকে চেপে ধরে নামিয়ে রাখতে পারেনি।
১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের বীরভূম জেলার কীর্ণাহারের অদূরের মিরিটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রণব মুখার্জি। তার বাবার নাম কামদাকিঙ্কর। তিনি একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং কংগ্রেস নেতা ছিলেন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি, এআইসিসি সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদেরও সদস্য হয়েছিলেন তিনি। তাই বলা যায়, উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতির ছোঁয়া পেয়েছিলেন প্রণব মুখার্জি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন প্রণব মুখার্জি। তবে ১৯৬৬ সালে, বিদ্যানগর কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হরেন্দ্রনাথ মজুমদারের হাত ধরে শুরু হয় প্রণব মুখার্জির রাজনৈতিক সফর। পাঁচ দশকের রাজনীতির পথ পাড়ি দিয়ে ২০১২ সালে ভারতের ১৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছিলেন প্রণব মুখার্জি। তবে হতে পারেননি। এরপর প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে অবসরের পর আর সক্রিয় রাজনীতিতে জড়াননি তিনি।
জয়ন্ত রায় চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা আর কৌশলের কারণে একজন বড় মাপের শিক্ষকে পরিণত হয়েছিলেন প্রণব মুখার্জি। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কিভাবে পাল্টাচ্ছে, ভারত বা এশিয়ার জন্য তার তাৎপর্য প্রভাব কেমন হবে, এগুলো নিয়ে তার বিরাট দক্ষতা ছিলো। এটি ছিলো তার বিরাট গুণ। তিনি বিরাট একজন শিক্ষক। তাকে জিজ্ঞেস না করে ইন্দিরা গান্ধি বা মনমোহন সিং কিছু করতেন না। এমনকি নরেন্দ্র মোদিও তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। প্রণব মুখার্জি একজন বড় রাজনীতিবিদ সেটা সবাই জানে। কিন্তু তিনি যে বড় মাপের শিক্ষক সেটা সবার জানা নেই।
প্রণব মুখার্জির দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ি বলেন, মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাজনীতিক প্রণব মুখার্জি আলো ছড়াতে শুরু করেন। প্রণব বাবুর জাতীয় রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই বড় কারণ। ইন্দিরা গান্ধি তার মেধায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে কংগ্রেসে নেন ও বড় বড় নেতাদের রেখে তাকেই ‘নম্বর টু’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এক সময় তাকে ইন্দিরা গান্ধির মানসপুত্র বলা হতো। অতি অল্প বয়সে ১৯৮২ সালে তাকে অর্থমন্ত্রী করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধি।
তবে গান্ধি পরিবারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে সেই কংগ্রেস থেকেও তাকে বেরিয়ে ভিন্ন দল করতে হয়েছিলো। যদিও পরে আবারো ফিরে আসেন তিনি কংগ্রেসে। ২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাঁচবার রাজ্যসভায় গিয়েছেন আর লোকসভায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। যা তাকে পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
ভারতে কংগ্রেসের বাইরেও উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তার গ্রহণযোগ্যতা তাকে রাজনীতিতে বিশেষ মর্যাদায় তুলে এনেছিলো বলে মনে করেন গৌতম লাহিড়ী।
তিনি বলেন, প্রণব মুখার্জি প্রেসিডেন্ট হওয়া পর্যন্ত তার জীবন উত্থানপতন ও টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। ২০০৪ সালে কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় আসে ওই সময় থেকে প্রণব রাজনৈতিক পরিপক্বতার তুঙ্গে ছিলেন। পরে তিনি অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি সবাইকে নিয়ে রাজনীতির চেষ্টা করেছিলেন বলে তাকে রাজনীতির চাণক্য নামেও অভিহিত করা হয়।
গৌতম লাহিড়ী আরো বলেন, যেকোনো সংকটময় মূহুর্ত থেকে উত্তরণে প্রণব মুখার্জির তৎপরতায় বারবার ঋদ্ধ হয়েছে ভারতের রাজনীতি। কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়েই তিনি ভারতের রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলো এমনকি বিজেপি নেতাদেরও শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন।
প্রণব মুখার্জি একমাত্র ভারতীয় বাঙালি যিনি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ছাপ রেখেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার ভারতের এই একমাত্র বাঙালি প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন। স্থানীয় সময় ৬টা ৪৫ মিনিটে প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি এক টুইট বার্তায় বাবার মৃত্যুর খবর জানান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮৪ বছর। মঙ্গলবার বিকেলে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক