ঢাকা ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে ও অপচয় কমিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাঁচাতে চায় সরকার। একই সঙ্গে দেশ থেকে পুষ্টিহীনতাও দূর করতে চায়। এ জন্য কৃষিকে বাণিজ্যিকী ও যান্ত্রিকীকরণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেসব খাতে খাদ্যের অপচয় হয় সেসব খাতে সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। খাদ্যের অপচয় কমাতে সরকার জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহযোগিতা নিয়ে দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মোট খাদ্যের প্রায় ৩০ ভাগ বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দেশে প্রায় ৪ কোটি মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার। প্রায় ৪৪ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। দেশে প্রতি পাঁচজনে একজন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল দুর্গম এলাকার দলিত, আদিবাসী, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও শহরের নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে পুষ্টিহীনতা বেশি।
জানা গেছে, ধান, গম, ভূট্টা, আলুসহ বিভিন্ন ফসল ও বাংলাদেশে উৎপাদিত সকল ফলমূল এবং খাদ্যপণ্য ফলানো থেকে শুরু করে ঘরে তোলা ও বাজারজাত করণে প্রচুর অপচয় হয়। এসব অপচয় রোধ করতে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পথ অবলম্বন করা হবে। এছাড়া খাদ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার ধাপগুলোর আধুনিকায়নও করা হচ্ছে। এর ফলে খাদ্যপণ্যের অপচয় অনেকটা কমে আসবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশের বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থানও ঘটে কৃষিকে অবলম্বন করেই। সময়ের সাথে সাথে সেই জলবায়ু ও প্রকৃতিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাতেও এসেছে পরিবর্তন। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে জোর দিয়েছে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে গত ২৫ বছরে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি শস্য উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন খরচ যেমন কমেছে, তেমনি শস্য সংগ্রহের পর অপচয়ও কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি আধুনিকায়নে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এখন তরুণরাও কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছে। বর্তমানে কৃষিকাজে জড়িতদের ৬০ শতাংশ তরুণ, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসা কৃষকদের গড় বয়স ৩৫।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা কৃষিকে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ করছি। শুধু বিদেশ থেকে যন্ত্র আমদানি নয়, দেশেই আরও কীভাবে কৃষিযন্ত্র তৈরি করা যায় সে বিষয়েও প্রচেষ্টা চলছে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে পারলে কৃষকও লাভবান হবে, ফসলের অপচয় কমবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এখন আমরা পুষ্টিকর খাদ্যের দিকে যাচ্ছি। মানুষের প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটানোর জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। মোটকথা, এখন বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হলো কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, ফসলের বৈচিত্র্য, বাণিজ্যিকীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ জন্য সরকার জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একদিকে যখন প্রায় ৪ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় কিলোক্যালরি সম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না, অপরদিকে তখন দেশে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার খাদ্য অপচয় হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িতদের শ্রম, সময় ও উপকরণ যোগ দিলে সেই অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন এক প্রবন্ধে বলেন, কৃষিখাত আমাদের খাদ্যের অন্যতম মূল উৎস। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কৃষি আধুনিকায়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রথমবার ১৯৯৬ সালে কৃষিনীতি প্রণীত হয়েছিল। ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে সেই কৃষিনীতিকে যুগোপযোগী করা হয়। জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ এর মূল লক্ষ্য, নিরাপদ লাভজনক কৃষি এবং টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ২০০৯ সালে সাড়ে তিন কোটি থেকে ১০ বছরে বেড়ে হয়েছে প্রায় চার কোটি ১৩ লাখ টন। মাঠ পর্যায়ে গবেষণা ও তদারকি বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাকে আরো শক্ত করার পাশাপাশি উৎপাদিত খাদ্য যেন নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে খাদ্যের অপচয় রোধে সবাইেকে এগিয়ে আসতে হবে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক