ঢাকা ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২১
বরিশালে পুলিশের নির্যাতনে স্বীকার হয়ে রেজাউল করিম রেজা (৩০) নামে সম্প্রতি এলএলবি পাস করা এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে দ্রুত সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা। নিহত রেজাউল বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইউনুছ মুন্সীর ছেলে।
শনিবার দিনগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেজার মৃত্যু হয়।
রোববার (৩ জানুয়ারি ) দুপুরে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে এবং মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। এরপর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ ডিসেম্বর রাত নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে রেজাউলকে ১৩৬ গ্রাম গাজা ও চারটি অ্যাম্পুল নেশা জাতীয় ইনজেকশনসহ আটক করে বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহী । পড়ে রাত পৌনে ১২টায় তাকে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি রাতেই মামলা দায়ের করা হয় এবং পরের দিন (৩০ ডিসেম্বর) রেজাউলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তবে মাদকসহ আটকের বিষয়টি মিথ্যা বলে অভিযোগ করে নিহত রেজার বাবা ইউনুছ মুন্সী জানান, ২৯ ডিসেম্বর রাতে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানের সামনে এসে বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহী রেজাউলের কাছে দুইজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানতে চান। উত্তরে রেজাউল কিছু জানেন না বলে জানালে এসআই মহিউদ্দিন নিজের গাড়ির কাছে যান এবং সেখান থেকে ফিরে রেজাউলের পকেটে হাত দিয়ে একটি নেশা জাতীয় ইনজেকশন পায় বলে জানান তিনি। পরে তাকে আটক করে ডিবি’র কার্যালয়ে নিয়ে যান এসআই মহিউদ্দিন।
তিনি আরো জানান, আটকের সময় রেজার কাছে কোন মাদক না থাকলেও তাকে গাঁজা ও ইনজেকশন দিয়ে ফাঁসানো হয়। এবং পুরোপুরি সুস্থ অবস্থায় রেজা কে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। এরপর শুক্রবার (১ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে আমাকে পুলিশের পক্ষ থেকে কল করে জানানো হয়, রেজাউল বাথরুমে পরে গেছে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে এজন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে রেজাউলের সঙ্গে আমাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি ।
বাথরুমে পরে গেছে মিথ্যা বলেছে আমাদের কাছে পুলিশ। মূলত ডিবি পুলিশের নির্যাতনেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রেজার বাবা। আর যাতে কোন ছেলে অহেতুক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে মুত্যু না হয় তার জন্য দ্রুত জড়িত পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান বাবাসহ রেজার স্বজনরা।
এদিকে নির্যাতনের কথা অস্বিকার করে বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহী জানান, রেজা কে মাদকসহ আটক করা পর কোতয়ালী থানায় হস্তান্তরের পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক জানান, গত ৩০ তারিখে আসামি রেজাউলকে আমরা রিসিভ করি। সেখানে ফরওয়ার্ডিং কাগজে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আসামির পায়ের বাহু থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় (১ জানুয়ারি) রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে শের-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরুষ সার্জারির এক নম্বর ইউনিটে আসামি রেজাউলকে ভর্তি করা হয়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, মাদকসহ আটকের পর নিয়ম অনুযায়ী আসামি রেজাউলকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। যেহেতু নিহতের স্বজনরা পুলিশের নির্যাতনে রেজার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। সে অনুযায়ী অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের খতিয়ে দেখা হবে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক