ঢাকা ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ১০, ২০২২
পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিয়ে বাড়িতে কিশোরীর সাথে কথা বলার অপরাধে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করে আলকাতরা লাগিয়ে দেয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে ভিকটিম মো. তুহিন হাওলাদার বাদি হয়ে গলাচিপা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন । মামলায় চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু সায়েম গাজীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও হাদি হাওলাদার ও হযরত হাওলাদারকে আসামি করা হয়েছে।
আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. মামুনুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্ত পূর্বক আগামী দুই আগষ্ট তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. হাসান সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত- গত মঙ্গলবার (৭ জুন) বিকালে উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের স্লুইজগেট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি বুধবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে এনিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
মামলার বরাদ দিয়ে ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার হাসান সরদার জানান, চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আবাসনে একটি বিয়ে বাড়িতে যায় একই এলাকার মো. ইউসুফ হাওলাদারের ছেলে মোঃ তুহিন মিয়া ও মো. লিটন গাজীর ছেলে মো. কালু গাজী। এসময় পার্শ্ববর্তী গ্রামের মন্টু প্যাদার মেয়ের সাথে তুহিন ও কালুকে কথা বলতে দেখে বিয়ে বাড়ির লোকজন।
বিষয়টি জানা জানি হলে মেয়ের আপন ভাই মো. সাইদুল ইসলাম ও স্থানীয় জনসাধারণসহ ঐ দুই যুবককে ধরে নিয়ে যায় ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সায়েম গাজীর অস্থায়ী কার্যালয় নমো স্লুইসগেট বাজারে। পরে ঐ দুই যুবকেদের জিজ্ঞাসা শেষে স্থানীয় বাজারের জনসাধারণের সম্মুখে ইউপি সদস্য সায়েম গাজীর নির্দেশে মো. হযরত মাঝি ও হাদী হাওলাদার মিলে তুহিন ও কালুর মাথা কামিয়ে আলকাতরা লাগিয়ে দিয়ে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী দুই যুবক বলেন, ওই মেয়ে আমাদের আগে থেকেই পরিচিত ছিল। তাই বিয়েবাড়িতে তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম। এটা দেখে মেয়ের বড় ভাইসহ আরও কয়েকজন আমাদের ধরে ইউপি সদস্য সায়েম গাজীর কাছে নিয়ে যায়। তারা আমাদের মারধর করে মাথার চুল কামিয়ে আলকাতরা লাগিয়ে দিয়েছে । আমরা লোকলজ্জার ভয়ে এখন পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।
ভূক্তভোগী কালুর পিতা মো. লিটন গাজী বলেন, আমার ছেলে এমন কি অপরাধ করেছে? যার কারনে মাথা কামিয়ে আলকাতরা দিয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
ওই মেয়ের বড় ভাই বলেন, ওরা মোবাইলে বিভিন্ন সময় আমার বোনকে বিরক্ত করতে। আমার বোন বিয়ে বাড়িতে গেলে সেখানে বসে ওরা দুই জনে অনেক উত্ত্যক্ত করে। এসময় বিষয়টি আমর বোন আমাকে জানালে ওদেরকে ধরে আমরা মেম্বারের কাছে নিয়ে যাই। পরে সালিসের মাধ্যমে সেলুন থেকে মেশিন দিয়ে তাদের ন্যাড়া করে সতর্ক করা হয়েছে। তবে আলকাতরা কে বা কারা লাগিয়েছে আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সী বলেন, জানতে পেরেছি ঐ দুই যুবক বিয়ের বরযাত্রী ছিলো, বিয়ে বাড়িতে কোন এক মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে স্থানীয়রা। এবিষয়ে নিয়ে কথা কাটা-কাটি হলে তাদের ধরে মাথা কামিয়ে দিয়েছে বলে ভূক্তভোগী পরিবার আমাকে জানিয়েছে। বিয়ে বাড়ির কিছু লোক জানিয়েছেন মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতে ছিলো এতে তাদের মাথা কামিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে যেই এ ঘটনা করে থাকুক এটা মোটেও ঠিক হয়নি এবং মানবাধিকার লংঘন বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং যেই এই ঘটনা করে থাকুক আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু সায়েম জানান, এরকম কোন সালিস বৈঠক হয়নি। আমি কারও মাথা ন্যড়া করে দেইনি।
গলাচিপা থানার ওসি এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম জানান, ঘটনাটি শুনিছি এটি ন্যাক্কারজনক। থানায় মামলা করার জন্য আসার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরে শুনলাম তারা নাকি আদালতে মামলা করেছে।
এবিষয়ে জানতে পটুয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান এর মুঠোফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক