ঢাকা ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
নবকন্ঠ ডেস্ক, বরিশালঃ ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা গ্রামের তপন ফকির। কেউ ডাকেন তপন ফকির নামে, কেউ চেনেন তপন সাধু নামে। আবার এলাকাবাসীর কাছে তপন ওঝা নামেও তিনি পরিচিত। নানান রোগে অসুস্থদের সাড়িয়ে তোলার নানা টোটকা দেন তিনি।
নৌকায় দুধ-গুড়ের রসে ভেজা তিন দিনব্যাপী চিতই পিঠার মেলার আয়োজন করে এলাকায় বেশ পরিচিত তিনি। স্বপ্নে আদেশ পেয়ে ভক্তদের জন্য প্রায় তিন যুগ ধরে নৌকার মধ্যে দুধ, গুড়ের রসে চিতই পিঠা ভিজিয়ে ভক্তদের খাওয়াচ্ছেন। যেটা ওই এলাকার একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৭টি মাটির চুলায়, মাটির পিঠার ছাচে গ্রামের বেশ কয়েকজন মহিলা তৈরি করছেন চিতই পিঠা। পাশেই বড় বড় পাতিলে জাল দেয়া হচ্ছে দুধ, আরেকটিতে ফুটানো হচ্ছে টাটকা খেজুরের রস। উঠানের মাঝখানে রাখা হয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও রং করা একটি নৌকা। নৌকার মাঝখানে পলিথিন বিছানো, কিনারে লাগানো আছে কয়েকটি লাল নিশান। ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে একটি বৈঠা। সারি সারি জ্বালানো হয়েছে মোমবাতি। এ মেলা ঘিরে বসেছে রঙ বেরঙের নানান খেলনা, খাবারের দোকান, আচারের দোকানসহ বিভিন্ন প্রকারের দোকানদার। তারা পশরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন নানান সব জিনিসপত্র।
তপন ফকির বলেন, প্রায় তিন যুগ ধরে চলছে তার এ দুধ-গুড়ে ভেজানো চিতই পিঠার মেলা। প্রায় ৩ যুগ আগে হঠাৎ এক রাতে তিনি স্বপ্নে আদেশ পান। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষে ৩ দিন ধরে নৌকার মধ্যে দুধ-খেজুরের রসে ভিজিয়ে চিতই পিঠা এলাকাবাসী ও ভক্তদের খাওয়াতে হবে। তাতেই বাড়বে তার দৈবশক্তি। সেই থেকে বিশ্বাস আর শুরু। প্রতিবছর এ সময় তিনি গ্রামবাসী ও ভক্তদের নৌকায় ভেজানো দুধ-চিতই পিঠা খাওয়ানোর আয়োজন করে আসছেন।
জানা গেছে, তপন ফকিরের দুধ চিতইয়ের মেলা’ নামে পরিচিত এই দুধ চিতই উৎসব শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে শেষ হবে এ অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় শুরু হয় পিঠা খাওয়ার আয়োজন।
সন্ধ্যার পর পাতিলে দুধ আর খেজুরের রস মিশিয়ে ঢেলে দেওয়া হয় নৌকায়। এর মধ্যে ডুবিয়ে দেয়া হয় চিতই পিঠা। বাটিতে তুলে তুলে পরিবেশন করা হয় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মাঝে।
তপন সাধুর বাড়ির খাদেম মো. আব্বাস খাদেম বলেন, এবার প্রতিদিন মেলায় ৫ মণ দুধ, ১ মণ খেজুরের রস আর প্রায় ১০ হাজার পিস চিতই পিঠা ভেজানো হয়। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় খাওয়া চলে গভীর রাত পর্যন্ত। প্রতিদিন আয়োজনের প্রায় পুরোটাই শেষ হয়ে যায়।
উৎসব দেখতে স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অগুনিত মানুষ ভিড় করে। ফরিদপুর জেলা সদর থেকে আগত শোভন বলেন, ‘আমি জীবনে কোথাও দেখি বা শুনি নাই এরকম নৌকার মধ্যে ভেজানো পিঠার কথা। তাই দেখতে এসেছি। ব্যতিক্রমী বটে। বেশ ভাল্লাগছে।’
গ্রামের বাসিন্দা উৎপল কুমার রায় বলেন, ‘ব্যাতিক্রমী আয়োজন হবে জেনে এখানে পিঠা খেতে এসেছি। একদম গরম ভেজানো পিঠা। খুবই সুস্বাদু খেতে।’
তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি মাঘ মাসের শেষের দিকে তিন দিনব্যাপী এমন ধরনের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে এই আয়োজন দেখতে।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক