ধর্ষণ কারীদের বিচার চাই

প্রকাশিত: ১১:০২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩

ধর্ষণ কারীদের বিচার চাই
নিউজটি শেয়ার করুন

 

বিগত তেরো বছরে এমন কাস্টমার আমি পাইনি। শহরের এক কোণে ছোট একটা ফার্মেসি আমার। রোজ রাত দশটায় অথবা দোকান বন্ধ করতেই কাস্টমার হাজির।আমি সারাদিন দোকানের খাটনির পরে প্রতিনিয়তই বিরক্তবোধ করতাম।অসহ্য লাগতো দুইশত টাকার ঔষধ এর জন্য বন্ধ দোকানটা মাঝ রাতে আবার খুলতে হতো।আজকেও দোকানে তালা লাগাতেই কাস্টমার হাজির।

 

 

আজকে আমি বলেই উঠলাম আপনার কাছে ঔষধ বিক্রি করবো না,একবারে দশ দিনের ঔষধ নিলে দোকান খুলতে পারি।কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে মেয়েটি বলে উঠলো এমন কথা বলবেন না ঘরে অসুস্থ স্বামী, কাজ করে টাকা নিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। পাঁচ-পাঁচ দশ কিলোমিটার হেঁটে আসতে কি আমারো মন চায় রে দাদা!একবারে এত ঔষধ নেওয়ার সামর্থ্য তো আমার নেই দাদা।

 

 

আমার নিজের অজ্যান্তেই বুক ফেটে কান্না চলে আসলো।নিজের প্রতি ঘৃণা হতে লাগলো। জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী মানুষকে না জেনে কত কথাই শুনালাম।বলে উঠলাম আপু এই নেন দশ দিনের ঔষধ, দশ দিন পরে এসে টাকাটা দিয়েন। মেয়েটি নিতে অমত পোষণ করলো।আমি বলে উঠলাম এখনো ভাই ভাবতে পারলেন না আপু।মেয়েটি হিন্দু সম্প্রদায়ের সে আবার বলে উঠলো ছি ছি দাদা কি বলছেন দেন ঔষধগুলো। মেয়েটি চলে গেলো আজ ১১ দিন হলো তার কোনো খবর নেই।আমি ভেবেই নিলাম মেয়েটি হয়তো ধোঁকাবাজ।

 

 

এই পৃথিবীর মানুষগুলো কতই না বিচিত্র। বিশ্বাসের এই প্রতিদান দেয় ভাবতে ভাবতে দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। হঠাৎ দেখি মাঝপথে মানুষের ভিড়। ভিড় ভেদ করে সামনে এগোলেই দেখলাম জামাকাপড় হীন ভাবেই পড়ে আছে সেই মেয়েটি।গায়ের জামাটা খুলে আপুর গায়ের উপর দিলাম। মেয়েটি আমাকে দেখে শতকষ্টেও হাসি দিয়ে বললো দাদা!

 

 

আপনার টাকা দিতে একদিন দেরি হয়ে গেলো।ব্যাথার আর্তনাদে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো কালকে আমার স্বামী মারা গেছে তাই আগের জমানো কিছু টাকা থেকে তার সৎকার করিয়েছি।বলেই টাকাটা আমার দিকে তুলে ধরতেই….শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেই। এক মূহুর্তেই চোখের পলকে এটা হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।আবার নিজের মানসিকতাকে ধিক্কার জানিয়ে আপু বলে চিৎকার দিলাম।

 

 

বাহ এই আমাদের সমাজ।আমাদের সমাজে ধর্ষণ কারীদের বিচার নেই। কি দোষ ছিলো এই জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী আপুটার।কেন তাকে ধর্ষণের শিকার হতে হলো।কেন প্রতিবাদ নেই এই সমাজে।আমি বিচার চাই আমার আপুর ধর্ষণের।

 

 

লেখিকা : রুমানা আফরিন।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ