ঢাকা ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
“ আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব নাহ নিলয় ভাই!আজ কেনো হয়তো কোনদিন ভালোবাসতে পারব নাহ।আমার সামনে আর এসব প্রস্তাব নিয়ে আসবেন নাহ দয়া করে।আমার অস্বস্তি হয়!কেমন যেন লাগে ।যদি পারেন আমার সামনেও আর আসবেন নাহ!আমার অনুরোধ রইলো আপনার প্রতি।আমি আসি।”
—কেনো অস্বস্তি হবে?ভালোই যখন বাসবে নাহ তখন অস্বস্তি কেনো হবে মেয়ে?ভালো না বাসলে তোহ আরও বিরক্ত হওয়ার কথা!আশেপাশের মানুষকে ডাকার কথা। প্রয়োজনে আমাকে দু একটা চড়-থাপ্পর মারা দরকার! এই যে আমি কতদিন হলো ঘুরছি এগুলো তো করলে নাহ।তাহলে বুঝব কীভাবে তুমি আমাকে ভালোবাসো নাহ?
“দেখেন নিলয় ভাই!আপনাকে আমি বরাবরই ভাই হিসাবে দেখে আসছি।আমি আপনাকে ওইরকম ভাবে কখনো দেখিনি।আর কাজে কেনো করে বুঝিয়ে দিতে হবে আমি আপনাকে ভালোবাসি নাহ?আবারও বলছি আমার সামনে আর আসবেন নাহ।”
—আমি যদি আর তোমার সামনে না আসি তুমি খুশি হবে তো নীলিমা?থাকতে পারবে আমাকে ছাড়িয়া?এক পলক না দেখিয়া?পারবে তো মেয়ে তোমাকে ভালোবেসে পাগল হওয়া ছেলের পাগলামিগুলা না দেখে থাকতে?যদি পারো, তবে শুনে রাখো মেয়ে –আমি আর কোনদিন তোমার সামনে আসব নাহ!প্রয়োজনে চলে যাব এই শহর ছেড়ে!
নীলিমা আর থাকলো নাহ ও চলে গেলো। প্রতিদিন এসব ওর ভালো লাগে নাহ।রাস্তায় এমন ভাবে প্রতিদিন গোলাপ দিয়ে কেও ভালোবাসি বলে?ছেসড়া ছেলে কোথাকার!যদি সত্যিই চলে যায় তাহলে ভালো হবে বেশ!
রাত ১২টা!স্টেশনে বসে আছে নিলয়!সে কথা দিয়ে এসেছে সে চলে যাবে।তাই আজ এই মধ্য রাতে তার চেনা শহর,চেনা মানুষ, হাজারো স্মৃতি, প্রিয় মানুষকে আগলে রাখার চেষ্টা সবকিছু ছেড়ে তার একটা অনুরোধে ঃআপনি চলে যান নিলয় ভাই! এই কথাটির জন্য আজ সে নিরবে সবার চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে! হয়তো ফেরা হবে নাহ এই শহরে।হয়তো আর তাদের দেখা হবে নাহ।আচ্ছা নীলিমা কি সত্যিই তাকে কখনো ভালোবাসবে নাহ?এতই খারাপ সে?মেয়েটা কি ভালো থাকবে?এসব ভাবতে ভাবতে ট্রেনে উঠলো নিরব।ট্রেন উছেড়ে দিলো। চেনা শহরকে বিদায় জানিয়ে এক অচেনা শহরের দিকে ছুটছে ট্রেন।থাকার ব্যবস্থা আগেই করা আছে।চাকরিটাই আবারও ফিরবে সে।মন দিয়ে কাজ করবে এখন সে।তাকে ভুলে থাকার জন্য। তবুও রাত হলে বুকে বিষাদের সুর বয়ে যায়।তাকে দেখার বড্ড ইচ্ছা মনে জাগে।বেহায়া মন বার বার তাকে দেখতে চায়!এ মনকে বুঝানো বড় দায়।এভাবে যেতে লাগলো দিন।
“সারাদিন এত কিছু করার পরও রাত হলে দেখা দেয় তাকে একটিবার দেখার ইচ্ছে! এই ইচ্ছে অপূরণীয় চাইলে এইটাকে পূর্ণতা দেওয়া যাবে নাহ।”
সপ্তাহ পেরিয়ে মাস,মাস পেরিয়ে বছর গেলো একটা!সময়টা বসন্তকাল চারিদিকে সবার মাঝে আনন্দের বন্যা।এই বসন্তকালকে ঘিরে হাজার মানুষের হাজারো স্মৃতি থাকে।অনেক কিছু করার থাকে!এই আনন্দ -উৎসবের মধ্যে দুজন আছে তারা ভালো নেই!দু’প্রান্তে দুজন দাঁড়িয়ে আছে এক আকাশ সমান দুঃখ,বিষাদ নিয়ে।একজন তার ভুল বুঝতে পেরে সেইটার প্রাশ্চিত্ত করছে আরেকজন তার প্রিয়কে দেখার জন্য ছটফট করছে।
নীলিমা যে কখন নিলয়কে ভালোবেসে ফেলেছে সে বুঝতে পারেনি।সেদিন তার নিলয় ভাইয়ের কথাগুলো মিথ্যে ছিল নাহ!আচ্ছা মানুষটা এত্ত অভিমানী কেন?বললাম দেখেই চলে গেলো?আর আসলো না কেন?আসলে কি এমন ক্ষতি হতো? দেখে যাক তার রিয়া ভালো নেই!মৃত্যু পথযাত্রী তার নীলিমা।ক্যন্সার যে তার নীলিমার বুকে বাসা বেধেছে। তার রিয়ার শেষ ইচ্ছেটুকু একটু পুরন করে যাক!
উপরের কথাগুলো চিঠিতে লিখে পাঠিয়ে দিলো, পোস্ট অফিসে।মুখে বলার সাহস তার নেই।তাই এই চিঠি। চিঠি লিখে নীলিমা ভাবতে লাগলো, সে কি আসবে?আচ্ছা তাকে কি আগের মতোই ভালোবাসে?নাকি এই চিঠি পাওয়ার পরও তার অভিমান ভাংগবে নাহ!তার এমন লাবন্যহীন মুখমণ্ডল কি তার প্রেমিকপুরুষ গ্রহণ করবে?
চিঠি পৌঁছাতে সময় লাগলো নাহ।আধুনিক যুগ!এখন একদিনেরও কম সময় লাগে চিঠি যেতে।ঠিকানা নিতে বেগ পেতে হয়নি নীলিমাকে!তার এক বন্ধুর কাছ থেকে নিয়েছে সে।অপেক্ষা এখন উত্তরের!
এভাবে কেটে গেলো সপ্তাহখানেক!বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দূরের ওই আকাশ দেখছে নীলিমা।এমন সময় চিরচেনা এক কন্ঠ ভেসে এলো নীলিমার কানে।এই কন্ঠ শুনার জন্য কত হাহাকার করেছে সে।এই কন্ঠের মালিককে দেখার জন্য কত অপেক্ষা তার।
—“এই আধুনিক যুগে চিঠি বিলুপ্ত প্রায় এমন যুগে কেও যে এভাবে একজনকে দেখার জন্য, নিজের ভুল স্বীকার আর ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে চিঠির মাধ্যমে জানা ছিলো নাহ!তবে চিঠির মাঝে যে এমন বিষাদ লুকিয়ে আছে শেষটা না পড়লে জানতাম নাহ।নিজের এমন হাল করা কি খুব দরকার ছিলো? আমাকে এত বিষাদ না দিলেও পারতে বিষাদপ্রিয়া।আমি যে শেষ হয়ে যাচ্ছি কি হবে এখন?”
বাহ!নামটা তো ভালোই দিয়েছ।আমার সাথে মিল আছে বেশ।জানো আমার প্রতিটি সময় প্রতিটি দিন বিষাদে ছেয়ে থাকে।কি এক বিষাদময় সময় পার করছি।এখন ভালোই ভালোই চলে গেলেই হলো।
—এসব বলো নাহ।এই দেখ আমি এসেছি তোমার ইচ্ছে পুরণ করতে।ভেব নাহ আমি তোমার চেহারা দেখে চলে যাব।আমি তো তোমার চেহারা দেখে ভালোবাসিনি।আমি তোমার ব্যক্তিত্ব দেখে ভালোবেসেছি।তোমার চেহারা যদি জ্বলসে যায় তবুও তোমাকে ভালোবাসব আগের মতো। বলো তোমার ইচ্ছে আমি পূরণ করব।
বেশি কিছু চায় নাহ আমি নিলয় ভাই!শুধু আপনার সাথে একটা দিন কাটাতে চাই।সেদিন আপনি পুরোপুরি আমার হয়ে থাকবেন।যাবেন আমার সাথে নদীর পাড়ে?বেলি ফুলের গাজরা পড়িয়ে দিবেন আমাকে?আমাকে আবারও গোলাপ দিয়ে সেই জায়গায় বলবেন “ভালোবাসি তোমাকে?” রাস্তার ধারের ওই ফুচকার দোকানে আমাকে নিয়ে যাবেন?আমার খোপায় গুজে দিবেন কাঠগোলাপ?পারবেন নীলয় ভাই?
—সত্যিই যাবে তুমি?তাহলে তৈরি হও শাড়িখানা পড়ে।এক হাতে দিও কাচের চুড়িখানা।এই চুলে খোপায় করিও তাহলে কাঠগোলাপ দিতে সুবিধা হবে। তুমি তৈরি হও আমি আসছি।
অত:পর দুজনে বেড়িয়ে পড়লো। কোন এক বিষাদময় বিকেলে একটু সুখের খোঁজে। তবুও কি সুখ পাওয়া যাবে?হয়তো পাওয়া যাবে খনিকের সুখ। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো! পালা এলো কাঠগোলাপের।খোঁজা হলো কাঠগোলাপ কিছুক্ষণ পর পাওয়া গেলো। নীলিমার খোপায় গুজে দিয়ে বললো – ভালোবাসি তোমাকে।আজীবন বাসব তোমাকে ভালো এভাবেই।তুমি আমার “বিষাদপ্রিয়া”
দুজনে চলে গেলো তাদের নিজ নীড়ে।মধ্যে কেটে গেলো বছর দুয়েক।এর মাঝে পৃথীবি থেকে বিদায় নিয়েছে বিষাদপ্রিয়া।যাওয়ার আগে তার প্রেমিকপুরুষকে দিয়ে গেছে কিছু স্মৃতি আর এক ঝাঁক বিষাদ।এ বিষাদ ফুরাবার নয়।
লেখনিতেঃ নুসরাত জাহান
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক