ঢাকা ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
অনলাইন ডেস্ক : গত আগস্ট মাসে এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) ও উচ্চতর স্তরের বেতন স্কেলের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করেন বরগুনার পাথরঘাটার বেশ কয়েকজন শিক্ষক। আর এই ফাইল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠাতে জন প্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা ঘুষ নেন পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবিএম জাহিদ হোসেন।
একই সময়ে এমপিওর জন্য (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) আবেদন করেন এ উপজেলার দু’জন আইসিটি (কম্পিউটার) শিক্ষক। তাদের কাছ থেকেও জন প্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদ।
টাকা না দিলে তিনি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ফাইলগুলো বাতিল করার ভয় দেখান। কেউ টাকা কম দিতে চাইলে বা দিতে না পারলে তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন শিক্ষক জানান, জাহিদ হোসেন বিকাশ বা অন্য কোনো মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে সহজে টাকা নিতে চান না। তিনি সব সময় সরাসরি ঘুষের টাকা আদায় করেন। যাতে কোথাও কোনো প্রমাণ না থাকে। জানা গেছে, জাহিদ বেশির ভাগ সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বসবাস করতেন বরিশাল শহরের ভাটিখানা রোডের বাসায়।
অভিযোগ অস্বীকার করে এবিএম জাহিদ হোসেন বলেন, আমি উপজেলায় ছয়মাস হয়েছে এসেছি। আমরা চেষ্টা করি সঠিক সময়ে ফাইল ছেড়ে দিতে।
এদিকে একই ভাবে ফাইল ছাড়ার অজুহাতে টাকা নেয় পাথরঘাটা শিক্ষা অফিসের প্রধান করণিক আবদুর রব মিয়া। তিনিও এসব ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জনপ্রতি দুই থেকে চার হাজার টাকা ঘুষ নেন। এ প্রতিবেদকের কাছে এদেরকে টাকা দেয়ার প্রমাণ রয়েছে। রব মিয়া পাথরঘাটায় একটানা ১৮ বছর ধরে চাকরি করলেও কখনোই বদলী হননি।
প্রায় একই অবস্থা এ বিভাগের অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক মিলনের বিরুদ্ধেও রয়েছে ঘুষ নেয়ার অনেক অভিযোগ। তিনি মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না। টাকা নেন বিশেষ কোনো স্থানে বসে। তাই কোথাও কোনো প্রমাণ রাখেন না।
চরফ্যাশন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক মিলন বলেন, ঘুষের মাধ্যমে কোন ফাইল ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কারও ফাইলে ভুল থাকে তা ফেরত পাঠানো হয়।
অন্যদিকে এসব ফাইল জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানোর পর সেখানেও গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। বরগুনা অফিসে ফাইল প্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহাদাত হোসেন। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে হয় বরিশাল উপ-পরিচালকের কাছে। সেখানে করতে হয় আরেক দফা দেন দরবার। এভাবেই বিভিন্ন অজুহাতে আইসিটি (কম্পিউটার) বিষয়ের অন্তত ২০ জনের ফাইল ২০-২৫ দিন আটকে রেখেছেন উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন। অথচ ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে এই ফাইলের সিদ্ধান্ত দেয়ার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া গত ৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়- শিক্ষকদের একাডেমিক ও নিবন্ধন সনদ এবং এনটিআরসিএ থেকে দেয়া সুপারিশপত্র ঠিক থাকলে আবেদনকৃত শিক্ষকরা এমপিওর জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন নানা অজুহাতে এসব অধিকাংশ ফাইল বাতিল করে দিয়েছেন। জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। উল্লেখ্য, আইসিটি শিক্ষকরা এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ পেয়েও বিনা বেতনে প্রায় দুই বছর ধরে চাকরি করে আসছেন।
এ বিষয়ে উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ফাইল আটকানো বা ছাড়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানি না। তবে ফাইল ছাড়তে দেরি হয়। কারন সঠিকভাবে দেখে ফাইলগুলো রেডি করতে অনেক সময় লাগে।
সরকার নির্ধারিত পাঁচ দিনের মধ্যে ফাইল ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, সরকারী নির্দেশনায় পাঁচদিন বলা হলেও আমাদের সঠিকভাবে কাজ করতে বেশি সময় লাগে। ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক