কালিয়ায় ঘাট মালিকদের দায়ি করলেন মাঝিরা!

প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২২

কালিয়ায় ঘাট মালিকদের দায়ি করলেন মাঝিরা!
নিউজটি শেয়ার করুন

 

জিহাদুল ইসলাম, কালিয়া নড়াইল: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর ও বারইপাড়া ঘাটে যাত্রি হয়রানী ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য ঘাট মাঝিরা দায়ি করছেন ঘাট মালিকদের।

 

ঘাট মালিকের চাহিদা পুরন করতে যাত্রিদের ওপর তাদের কঠোর হতে হয় বলে জানালেন মাঝিরা। পুরাতন বছরের ইজারা শেষ হওয়া এবং নতুন বছরে ইজারা শুরু হলেও করোনা কালীন বাড়তি ভাড়ার রেস এখনো টানতে হচ্ছে যাত্রীদের। ওই ঘাটে যাত্রি হয়রানী ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে উপজেলা প্রশাসন বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেনে উপজেলার বেন্দারচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান ফকিরের ছেলে জাকারিয়া হুসাইন।

 

১১ এপ্রিল (সোমবার) তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে এ অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি যাত্রি পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যপারে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের আহ্বান জানান উপজেলা প্রশাসনকে।এদিকে ১৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) পহেলা বৈশাখে পুর্বের ইজারা শেষ হয়ে নতুন ইজারা শুরু হয়েছে। ইজারার ১ম দিনেই সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রি প্রতি ১০ টাকা, ১জন আরোহীসহ মোটরসাইকেল ৩০টাকা ও ২জনসহ ৪০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আগে করোনার দোহাই দিয়ে ভাড়া বেশী নেওয়া হতো। কিন্তু এখন কেন বেশী নেওয়া হচ্ছে?

 

এবিষয়ে কাঞ্চনপুর ঘাট মাঝিদের সরদার বুলু শেখ জানান, শুনেছি দেয়াডাঙ্গার এনামুল নামে একজন ঘাট ডেকে নিয়েছেন। কিন্তু সমস্ত বিষয়ে তদারকি করছেন জেলা পরিষদ সদস্য পুরুলিয়া গ্রামের রানী বেগম। আমরা রানী বেগমের বাড়ীতে গেলে তিনি প্রতিদিন ৯ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান।

 

আমরা রানী বেগমকে আমাদের দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেছি, পুর্বের মালিককে ৫টাকা ভাড়ার বিপরীতে প্রতিদিন ২৫০০/৩০০০ টাকা, ১০ টাকা ভাড়া বিপরীতে প্রতিদিন ৬,৩০০ টাকাসহ ঘাটের উভয় পাশে টোলচার্ট টাঙ্গিয়ে দিতে হবে জানালে রানী বেগম মেনে না নেওয়ায় আলোচনা অমিমাংসীত রয়ে যায়। মাঝিরা বলেছেন, তারা আবারো যাবেন, যদি কোন ফয়সালা না হয় তারা ঘাট ছেড়ে দিবেন।

 

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, কালিয়ার বারইপাড়া ও কাঞ্চনপুর খেয়া ঘাট ১২ লক্ষ টাকায় সরকারী ভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছে। বারইপাড়া ঘাট মনির শেখের নামে ও কাঞ্চনপুর এনামুলের নামে থাকলেও জেলা পরিষদ সদস্য রানী বেগমই এখানে মূখ্য বলে জানা যায়।

 

কাঞ্চনপুর ঘাটে ৩০টি নৌকা দুই শিফ্টে চলে, তাতে ৩০ টি পরিবারের ভরন পোষন চলে বলে জানান মাঝিরা। সচেতন মহলের দাবি, ঘাট মালিকেরা সহনশীল না হলে অতিরিক্ত ভাড়ার প্রকোপ থেকে সাধারণ যাত্রিরা রেহাই পাবেনা। এখানে পরিস্থিতির স্বীকার হয় ঘাট মাঝিরা। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চিরকাল আর ফায়দা লুটে খায় মধ্যস্বত্ত্বভোগী দালালরা। এ ব্যপারে উপজেলা প্রশাসনকে ঘাট মালিকদের ব্যপারে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন তারা।

 

এ বিষয়ে জেলা পরিষদ সদস্য রানী বেগমকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঘাট মলিক নই। তবে জেলা পরিষদের সদস্য হওয়ায় তদারকি করি। ভাড়ার রেট কত হবে এ বিষয়ে অফিস থেকে জেনে চার্ট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানান।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ঘাটের কোন টোল রেট পাইনি। জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে আমরা ব্যবস্থা নিব।

 

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন এনডিসি বলেন, প্রতি বছর ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা থাকলেও বিগত ১০ বছর এটা রিবাইট হয়নি। কিন্তু বাস্তবে অনেক বেড়ে গেছে। যে কারণে এটা পুনঃনির্ধানের প্রসঙ্গটা এসেছে। যেখানে ঘাট সেখানকার জেলা প্রশাসক কমিটির মাধ্যমে আমাদের এখানে প্রস্তাব করলে বিভাগীয় কমিটি সেটা এপ্রুভ করে দিবে। শুধু কালিয়ায় নয় পুরা বিভাগেই যেহেতু দীর্ঘদিন যাবত ভাড়া নির্ধারণ হয় নাই তাই পুনঃনির্ধারণের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। নতুন ভাড়া নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত পুরাতন ভাড়াই বহাল থাকবে বলে তিনি জানান।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ