করোনা ও মৌসুমি জ্বর ঘরে ঘরে, পরীক্ষায় অনীহা

প্রকাশিত: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০২২

করোনা ও মৌসুমি জ্বর ঘরে ঘরে, পরীক্ষায় অনীহা
নিউজটি শেয়ার করুন

 

রাজধানীর আজিমপুরের সরকারি চাকরিজীবী আসমা বিনতে ইসলাম গত সপ্তাহে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন। তীব্র জ্বরের সঙ্গে আছে মাথাব্যথা। ওষুধ সেবনেও তা কমার লক্ষণ নেই। করোনায় আক্রান্তের সব লক্ষণ থাকলেও তিনি পরীক্ষা করাননি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া টানা এক সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর পরিবারের সাত সদস্যের সবাই জ্বরে আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করাননি একজনও।

 

আসমার পরিবারের মতো অবস্থা এখন দেশের অনেক স্থানেই। করোনা সংক্রমণ ও ডেঙ্গুর সঙ্গে হঠাৎ সারাদেশে বেড়েছে সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে জ্বর নিয়ে ভীতি থাকলেও অধিকাংশেরই করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই। করোনা ও ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ কাছাকাছি হওয়ায় অনেকেই দ্বিধার মধ্যে থাকছেন। এতে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে সারাদেশে তাপপ্রবাহ বইছে। তাপমাত্রার কারণে সর্দি-জ্বর বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে করোনা মহামারির এই সময়ে অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

 

রাজধানীর বেশ কিছু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর দেখা দিলেও হাসপাতালে রোগীর চাপ নেই। বাড়েনি করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ এবং দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুটি পরীক্ষাই করানোর পরামর্শ দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে সব প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। তবে নাগরিকদের মধ্যে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। করোনা ও ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলেও পরীক্ষা করাতে আসছেন না তাঁরা।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের শুরুতে করোনায় দৈনিক ১৩ সহস্রাধিক নমুনা পরীক্ষা করা হলেও এটি কমে এখন ৬ হাজারে নেমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি মাসে ১৫ দিনের মধ্যে ৫২১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, যা বছরের শুরুর চার মাসের রোগীর চেয়ে বেশি।

 

রাজধানীর মহাখালী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত কলেরা হাসপাতালেও কয়েক দিন ধরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোগীর সংখ্যা কম। অন্যান্য সময় দৈনিক ৫০০ রোগীর সেবা দেওয়া হলেও এখন সে সংখ্যা নেমে এসেছে সাড়ে তিনশতে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান চিকিৎসক বাহারুল আলম সমকালকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন তাঁদের হাসপাতালে কম রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষাও আগের চেয়ে কম হচ্ছে।

 

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক। ঈদযাত্রা শেষে মানুষ রাজধানীতে ফিরলে করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে পারে।

 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বর্তমানে চার ধরনের জ্বর জনগণকে বেশি ভোগাচ্ছে- করোনা, ডেঙ্গু, মৌসুমি জ্বর এবং শ্বাসতন্ত্রীয় ভাইরাসজনিত জ্বর। রোগী কোনটাতে আক্রান্ত- দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব না হলে বড় বিপদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ব্যক্তি যে ভাইরাসেই আক্রান্ত হোক না কেন, করোনা প্রতিরোধী ব্যবস্থা যেটা আছে, তা মানতে হবে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য মশা মারার একটা সমন্বিত যৌথ কর্মসূচি নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সামাজিক দূরত্বও নিশ্চিত করতে হবে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, জ্বর দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করাতে হবে। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ডেঙ্গুর মশা নিধন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। টাইফয়েড যেহেতু পানিবাহিত; সে ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।

 

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভাইরাসজনিত জ্বর একজনের কাছ থেকে অন্যজনে ছড়ায়। এ কারণে এক ব্যক্তির কাছ থেকে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে। এই জ্বর সাত দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এ কারণে এমন জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয় কম। এ ছাড়া ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যাচ্ছে। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের টিকা দেওয়া হয়ে যাওয়ায় করোনা হলেও তেমন জটিলতা দেখা দিচ্ছে না। এ কারণেই মানুষ পরীক্ষা করাতে চাচ্ছে না।


নিউজটি শেয়ার করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ