ঢাকা ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০
খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের লাল হাসপাতাল এলাকায় সম্প্রতি বন্ধুদের হাতে খুন হওয়া কলেজ ছাত্র হাসিবুর রহমান হত্যা মামলায় আসামি ছেলেকে না পেয়ে পুলিশ তার বৃদ্ধ বাবা রুনু হাওলাদারকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে। এমনকি ঘটনাস্থলে ছেলের সঙ্গেই তার উপস্থিতি এবং ঘটনার পরিকল্পনাকারী হিসেবেও উল্লেখ করে পুলিশ তাকে ওই মামলায় জড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী শিল্পী বেগম।
বুধবার বেলা ১২টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি কেএমপি কমিশনার এবং সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখুন, কেন এবং কার স্বার্থে আমার নির্দোষ স্বামীকে এ হত্যা মামলায় জড়ানো হলো?’
শিল্পী বেগম আরও উল্লেখ করেন, ‘গত ১৯ আগস্ট রাতে নগরীর খালিশপুরের লাল হাসপাতালের বিপরীতে একটি দোকানের মধ্যে দুর্বৃত্তরা হাসিবুর রহমান এবং তার বন্ধু জুবায়ের ও রানাকে কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আহত হাসিবুর রহমান মারা যায়। এ ঘটনার পরদিন ২০ আগস্ট নিহত হাসিবুরের বাবা মো. হাবিবুর রহমান শিকদার বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনের নামে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আমার ছেলে হাসান রাব্বিকেও আসামি করা হয়।’
‘কিন্তু ঘটনার ৮ দিন পর ২৬ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খালিশপুর থানার এসআই মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে এএসআই নিজামসহ পুলিশ বাসায় গিয়ে আমার ছেলেকে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘরে শোয়া আমার অসুস্থ ও বৃদ্ধ স্বামী রুনু হাওলাদারকে দেখে তার কাছে মোবাইল এবং সিমকার্ড দাবি করে। কথা-বার্তার এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাকে খালিশপুর থানায় নিয়ে যায়। আমরা যোগাযোগ করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ছাব্বিরুল আলম ও তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিনি তো আসামি না, জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় আনা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করেই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে’। কিন্তু তাকে দুদিন থানায় বসিয়ে রেখে ২৮ আগস্ট হাসিব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ’
শিল্পি বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী প্লাটিনাম-জুবিলী জুটমিলের একজন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক। তার হার্টে রিং পরানো, খুবই অসুস্থ তিনি। তার মতো একজন মানুষের পক্ষে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার সঙ্গে কোন ধরনের সম্পৃক্ত থাকার প্রশ্নই আসে না।’
সংবাদ সম্মেলনে হাসিব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিডিয়ায় প্রকাশিত সিসিটিভি’র ভিডিও ফুটেজের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, হাসিব ও তার দুই বন্ধুকে কোপানোর দৃশ্য ওই ফুটেজে রয়েছে। পুলিশও ফুটেজ দেখেই হত্যাকারীদের সনাক্ত করবে বলে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমানের সঙ্গে নিহত হাসিবুরের পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় তিনি হাসিবের পরিবারকে খুশি করতেই আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে মামলায় জড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি অন্য আসামিদের মা-বাবাদেরও থানায় নিয়ে হয়রানি করছেন বলে শুনেছি।’
এ বিষয়ে কেএমপি কমিশনারসহ ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিল্পি বেগম।
মামলায় ছেলেকে আসামি করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে হাসান রাব্বি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি-না, তা আমার জানা নেই। তারপরও কারও প্ররোচনায় পড়ে আমার ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হলেও আমাদের কোন আপত্তি নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি হাসিব হত্যার সঠিক বিচার দাবি করে অবিলম্বে তার স্বামী রুনু হাওলাদারকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি এবং দ্রুত মুক্তির দাবি জানান।
Design & Developed By ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক